পেঁয়াজের ট্রাক লুট: সিরাজগঞ্জে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের ২১ বছর করে কারাদণ্ড

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৩:৩১ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৩:৩৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা টাইমস
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি আড়ৎদার মো. সাব্বির আলম ওরফে সবুজ, লুণ্ঠিত পেঁয়াজ কেনার দায়ে তার ২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে

সিরাজগঞ্জে ২৫২ বস্তা পেঁয়াজসহ ট্রাক লুট করার ২০১৭ সালের ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত। একইসঙ্গে আলোচিত এই মামলায় আরও তিন আসামিকেও এই দণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এম আলী আহামেদ এ রায় ঘোষণা দেন। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি পলাতক ছিলেন।

রায়ে পৃথক ধারায় আসামিদের জরিমানা অনাদায়ে বিনাশ্রম কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামি মিন্টু ও মনসুর আলীকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

২১ বছর করে দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন— কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক উপ-পরিদর্শক মো. মাইনুল হাসান, সলঙ্গা থানার সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক মতিউর রহমান খান, সলঙ্গা থানার পাটধারী গ্রামের মো. শীতল প্রামাণিকের ছেলে মো. রেজাউল করিম ওরফে রনি, একই থানার হাসানপুর গ্রামের মো. তাজুল ইসলামের ছেলে মো. সবুজ আলী ও বাগুন্দা (বাগদা) গ্রামের মো. বাহাজ উদ্দিনের ছেলে মো. আনিস ওরফে আনিস ড্রাইভার।

এছাড়া ২ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আড়ৎদার হলেন— সদর উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের মো. নান্নু মণ্ডলের ছেলে মো. সাব্বির আলম ওরফে সবুজ।

সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার রাশেদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে পেনাল কোডের ৩৬৫ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ৭ বছর কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ২০ হাজার জরিমানা অনাদায়ে ১ মাস বিনাশ্রম করাদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে পেনাল কোডের ৩৯২ ধারায় একই আসামিদের ১৪ বছর কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ১ মাস বিনাশ্রম করাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আসামী সাব্বির আলম ওরফে সবুজকে পেনাল কোডের ৪১১ ধারায় ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা  জরিমানা অনাদায়ে ১ মাস বিনাশ্রম  কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।’

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১০ জুলাই রাত ১০টার দিকে ২৫২ বস্তা ভারতীয় এলসির পেঁয়াজসহ একটি ট্রাক চাপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ বন্দর থেকে চট্রগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়। ১১ জুলাই দুপুরের দিকে ওই ট্রাকের চালক মোরশেদ আলী ট্রাক মালিক মো. মুজিবুর রহমানকে ফোনে জানান সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় সমবায় পেট্রল পাম্পের কাছে হেলপারসহ তাকে আটক করেছে পুলিশ। একটি প্রাইভেটকারে তাদের তুলে সিরাজগঞ্জ শহরে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশ ট্রাকটি পরিত্যক্ত অবস্থায় শিয়ালকোল বিসিক এলাকা থেকে উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় ট্রাক মালিক রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার মো. মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে সলঙ্গা থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত চলাকালে সবুজ আলী নামে এক আসামি গ্রেপ্তার হলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরবর্তীতে তদন্তে বেরিয়ে আসে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ বাকি আসামিদের নাম। তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ জন্য ১৫ জন সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় আসামিদের এ দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুর রহমান। আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট বিমল কুমার দাস, ইন্দ্রজিত সাহা, মো. আসিফ আজাদ, মো. জামাল উদ্দিন ও মো. কামরুল হুদা।

(ঢাকাটাইমস/০৩জুলাই/প্রতিনিধি/এসআইএস)