ভারত-বাংলাদেশে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট চক্র: দিল্লিতে অ্যাপোলোর চিকিৎসক গ্রেপ্তার
প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০২৪, ১৪:০০ | আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪, ১৪:১১

বাংলাদেশ ও ভারতে অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপন চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসককে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ। ৫০ বছর বয়সি ওই চিকিৎসকের নাম ডা. বিজয়া কুমারী।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের বিভিন্ন সময়ে ওই নারী চিকিৎসক নয়াদিল্লি সংলগ্ন নয়ডা শহরে যথার্থ নামের একটি হাসপাতালে অন্তত ১৫ থেকে ১৬ ব্যক্তির কিডনি সরিয়েছেন। যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, ডা. বিজয়া কুমারী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সক্রিয় একটি চক্রের সঙ্গে কাজ করতেন। চক্রটি মধ্যবর্তী ব্যক্তি বা দালালদের মাধ্যমে দরিদ্র বাংলাদেশিদের অর্থের লোভ দেখিয়ে নয়াদিল্লির আশপাশের কিছু হাসপাতালে নিয়ে আসত। সেসব হাসপাতালে চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বাংলাদেশিদের কিডনি অপসারণ করতেন। গত মাসে নয়াদিল্লি থেকে এই চক্রের তিন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, চক্রটি নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নামে বাংলাদেশ থেকে আসা ভুক্তভোগীদের অপারেশন সংক্রান্ত বিভিন্ন ভুয়া নথি প্রদান করত। এতে কিডনি দাতা এবং গ্রহীতার (উভয় বাংলাদেশি) মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করা হতো, যা ভারতীয় আইন অনুসারে প্রয়োজনীয়। এসব জাল নথিও জব্দ করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ সূত্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজয়া কুমারী একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট এবং কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন, প্রায় ১৫ বছর আগে অ্যাপোলো হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তার হিসাবে যোগদান করেছিলেন।
যথার্থ হাসপাতালের অতিরিক্ত মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট সুনীল বালিয়ান বলেছেন, বিজয়া কুমারী হাসপাতালে একজন পরিদর্শন পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করছিলেন এবং শুধুমাত্র তার আনা রোগীদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃক কোনো রোগী তাকে দেওয়া হয়নি এবং তিনি গত তিন মাসে একটি অস্ত্রোপচার করেছেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিক রাসেল (২৯), তার সহযোগী মোহাম্মদ সুমন মিয়া, ইফতি এবং ত্রিপুরার বাসিন্দা রতিশ পালসহ কিডনি পাচার চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকজনকে অর্থের প্রলোভন দিয়ে দিল্লি নিয়ে আসেন। যাদেরকে প্রতিটি কিডনির বিনিময়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা প্রদান করতো চক্রটি। তবে কিডনি গ্রহীতাদের কাছ থেকে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা আদায় করতো এবং প্রতিটি কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য ডা. বিজয়া কুমারীকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা দিয়েছে। ইফতি ছাড়া বাকি সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সূত্রটি আরও বলেছে, প্রায় তিন মাস আগে রাজস্থানে একটি কিডনি পাচার চক্র ধরা পড়ার পর তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে আল শিফা নামে একটি মেডিকেল ট্যুরিজম কোম্পানির খোঁজ পায় পুলিশ। এই কোম্পানি কিডনি দাতা এবং গ্রহীতাদের থাকার ব্যবস্থা, চিকিৎসা এবং পরীক্ষা সমন্বয় করতো।
পুলিশ জানিয়েছে, গত মাসে দিল্লির নিকটবর্তী যশোলা গ্রামে একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা রাসেল ও তার সহযোগী ঢাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া (২৮) এবং মোহাম্মদ রোকনকে (২৬) গ্রেপ্তার করা হয়। ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন রাসেল। যেখানে বাংলাদেশ থেকে আগত কিডনিদাতাদের রাখা হতো।
গ্রেপ্তারের সময় রাসেলের ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ব্যাগে ৯টি পাসপোর্ট, দুটি ডায়েরি এবং একটি রেজিস্টার জব্দ করে পুলিশ। এই পাসপোর্টগুলো কিডনি দাতা ও গ্রহীতাদের ছিল এবং ডায়েরিতে দাতা এবং গ্রহীতাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেনের বিবরণ ছিল বলে জানা গেছে।
এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত রোকনের কাছ থেকে আরও একটি ব্যাগ জব্দ করে পুলিশ। ব্যাগে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২০টি স্ট্যাম্প এবং দুটি স্ট্যাম্প কালি প্যাড (নীল এবং লাল) রয়েছে, যা জাল কাগজপত্র তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।
(ঢাকাটাইমস/০৯জুলাই/এমআর)