কুয়াকাটা সৈকতে জিও ব্যাগে বাড়ছে দুর্ঘটনা

আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ১০ জুলাই ২০২৪, ১৭:১৫| আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৪, ১৮:০১
অ- অ+

সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জিরো পয়েন্টেসহ মূল কেন্দ্রের দুইপাশে জিও টিউব এবং জিও ব্যাগ এখন ভোগান্তির অপর নাম। জোয়ারের সময় সৈকতের মূল কেন্দ্রে পর্যটকরা সমুদ্রে গোসলে নেমে পড়তে হচ্ছে দুর্ঘটনায়। এমনকি সৈকতের জিরো পয়েন্টের দুই পাশে স্বাভাবিক চলাচলেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পর্যটকেরা। দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতে এমন দুর্ভোগ থাকা সত্ত্বেও তা লাঘবে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। উদাসীনতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন পর্যটকেরা। দীর্ঘদিন ধরে এমন অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তারা।

অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য দ্রুত জিও ব্যাগের শেওলা দূর করার ব্যবস্থা সৈকতে পর্যটকদের সৈকত নিরাপত্তা নির্দেশনামূলক সতর্ক বার্তা টাঙানো, জোয়ার ভাটার তথ্য প্রচার করা, কুয়াকাটা দর্শনীয় স্পটের ভ্রমণ ভাড়া তথ্যসহ বৈরী আবহাওয়ার সতর্কতামূলক বার্তা প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের মতে, পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে কুয়াকাটায় বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। সমুদ্রের তীরে এসে সৈকতের বালিয়াড়িতে পায়চারি করা উত্তাল ঢেউয়ে গা ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যাকুল থাকেন আগত দর্শনার্থীরা। কিন্তু সৈকতে নামা গোসল করাটা যে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, বিষয়ে কিছুই জানেন না প্রথমবারের মতো কুয়াকাটা ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা। আবার পর্যটনের ভরা মৌসুমে সৈকতের যে রূপ তা বর্ষায় ভিন্ন রূপ ধারণ করায় অনেকেই এমন ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ে আঁচ করতে পারেন না।

সমুদ্রপ্রেমী পর্যটকরা উত্তাল সমুদ্রে হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠতে ব্যাকুল হয়ে পড়া পর্যটকেরা বিষয়ে না জানার কারণে মারাত্মক দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছেন।

অপরদিকে শিশু, নারী বয়স্ক মানুষের জন্য জোয়ার ব্যতীতই স্বাভাবিক সৈকতের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এর মধ্যেই অনেকে জিও টিউব এবং জিও ব্যাগের গর্ত সহ শ্যাওলায় পা পিছলে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এতে গুরুতর আহত হয়ে আনন্দ ভ্রমণ মুহূর্তেই পরিণত হচ্ছে নিরানন্দে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল আজহার পর থেকে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ জনের বেশি পর্যটক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের পা ভেঙে গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সৈকতের বালু ক্ষয় রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবহার করছে জিও টিউব জিও ব্যাগ। এই জিও ব্যাগ পুরো সৈকতে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। ফলে আগত পর্যটকসহ স্থানীয়রা যখনই সৈকতে নামতে যায় তখনি বিপদের সম্মুখীন হন। জিও ব্যাগের সৃষ্ট গর্তের মধ্যে দেখা গেছে কংক্রিটের বড় বড় টুকরার সঙ্গে রডের অংশসহ কাচ ভাঙা অপচনশীল প্লাস্টিকের বর্জ্য আটকে আছে। এর দ্বারা পর্যটকরা হাত-পা কেটে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ভ্রমণের ইতি টেনে চলে যাচ্ছেন তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে। আবার সাঁতার না জানা পর্যটকদের কাছে ওই গর্তগুলো হয়ে ওঠে মরণফাঁদ।ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আগত পর্যটক মো. হিমেল বলেন, আমি সৈকতে নামার সময় পড়ে গিয়ে পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি। পা ফুলে গেছে। এই বিচে সতর্কতা সংবলিত লেখা থাকলে আমি সাবধানতা অবলম্বন করতাম। তাহলে আমার সমস্যা নাও হতে পারত।

ঢাকা থেকে আগত পর্যটক আবু নাসিম মুন্সি বলেন, সৈকতের অবস্থা দেখলে মনে ভয় কাজ করে। সমুদ্রের তীরে এসে যদি স্বাচ্ছন্দ্যে গোসল হাঁটাচলা না করা যায় তাহলে সৈকতে কেনো আসবে পর্যটক। জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে আশেপাশে সব জায়গায় ফেলা জিও ব্যাগ পিচ্ছিল হয়ে আছে। এর দ্রুত সমাধান না করলে পর্যটকের মারাত্মক ক্ষতি হবে। এর প্রভাবে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে পর্যটকেরা।

পর্যটন ব্যবসায়ী মো. কে এম বাচ্চু বলেন, জিও ব্যাগ দিয়ে বেড়িবাঁধ সংরক্ষণের কাজ করা হয়েছে। এখন এগুলো পর্যটকদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই জিও ব্যাগের কারণে আহত এবং নিহত হওয়ার ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। ব্যবসায়ী হিসেবে জোর দাবি করছি যাতে পর্যটকরা সেভ জোন রিস্কি জায়গাগুলোর নির্দেশনার মাধ্যমে জানতে পারে ব্যবস্থা করা হোক।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, ঝুঁকি মুক্ত সৈকত করা দরকার। পুরো সৈকতে এখন জিও ব্যাগ একটা আতঙ্ক হিসেবে কাজ করছে। গর্ত আর শেওলা হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সৈকতে নামার জন্য আরও কয়েকটি স্পট তৈরি করা দরকার। স্থায়ী প্রকল্পের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ সংরক্ষণ করে নান্দনিক বিচ করলে পর্যটক আসবে, না হয় পর্যটকরা কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, আমরা বিষয়টা নিয়ে ডিসি মহোদয় ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করব। নিরাপত্তা নির্দেশনা না দিলে পর্যটকরা জানবে কি করে যে কোন জায়গাটা রিস্ক ফ্রি। এটা দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে কুয়াকাটা পৌরসভা গঠন করা হলেও এর তদারকি করছেন বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটি। যার আহ্বায়ক জেলা প্রশাসক সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কুয়াকাটা পৌরসভা চাইলেই অনেক কাজ করতে পারে না। এর জন্য অনেক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে আমি আহ্ববান করবো, বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

কুয়াকাটা পৌরসভার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সমুদ্র সৈকত তথা পর্যটকের সুবিধার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ নিরলস কাজ করলেও প্রশাসনের কিছু মহল তা দমিয়ে রাখতে নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যেখানে পর্যটকের নিরাপত্তায় এর পূর্বে সৈকতে রাতে আলোর ব্যবস্থা করা হলেও একটি মহলের কারণে সৈকত এলাকা এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। এতে যেমন নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে তেমনি নানা অপরাধ সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

পর্যটকের সেবার মান নিশ্চিতে এসব অব্যবস্থাপনা দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে দাবি জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন পৌর কাউন্সিলর।কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. রবিউল ইসলাম বলেন, পৌর মেয়র, কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ, হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা নিয়ে ইতোমধ্যে একটি মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। সেখানে আলোচনা হয়েছে সৈকতে পর্যটকদের সৈকত নিরাপত্তা নির্দেশনা দেওয়ার। শিগগিরই এটি স্থাপন করা হবে।ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সবার আগে। বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি মিটিং হয়েছে আশা করি খুব কম সময়ের মধ্যে কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকদের সৈকত নিরাপত্তা নির্দেশনা সংবলিত লেখা সাঁটানো হবে।

(ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/পিএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ভৈরবে দুদিনে শিয়ালের কামড়ে আহত ১৫ 
সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার গ্রেপ্তার
বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রত্যয়ে রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে তারুণ্যের উৎসব
স্বামীসহ দীপু মনির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা