আদালতের রায়ের পরও সড়ক অবরোধ হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা: ডিএমপি
প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০২৪, ১৩:৩৪ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪, ১৫:১৮
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ইস্যুতে আদালতের রায়ের পরও শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধে নামলে পুলিশ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ মহিদ উদ্দিন।
তিনি বলেন, গতকাল উচ্চ আদালতের রায়ে কোটায় ৪ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিয়েছে। ফলে আমরা মনে করি এর ফলে তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা হারিয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এদিন দুপুর তিনটায় শিক্ষার্থীদের বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি শুরুর আগে ডিএমপি থেকে এমন সতর্কতা এলো।
ড. খ মহিদ উদ্দিন বলেন, গত পহেলা জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলন রাজধানীবাসীর দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। তারপরও আমাদের পেশাদারিত্বের স্থান থেকে আন্দোলনের সুযোগ দিয়েছি। তাই আমাদের অনুরোধ মহানগরবাসীর দুর্ভোগ লাগবে শিক্ষার্থীদের তাদের আন্দোলন থেকে সরে আসা উচিত।
‘তারপরও কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরি করলে দেশের প্রচলিত আইন কার্যকর আছে, সেটি যে জায়গায় থাকার কথা সে জায়গায় থাকবে।’
আদালতের রায়ের পরও শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচিতে নামলে পুলিশ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে খ. মহিদ উদ্দিন জানান, পুলিশ অবশ্যই বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
‘শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের পেশাগত এপ্রোচ ছিল, সেটি পরবর্তীতেও রাখতে চাই। আমরা আশা করি শিক্ষার্থীরাও সেটি অনুধাবন করবে।’
তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই বদ্ধপরিকর, যারা আন্দোলন করে তাদের যেমন অধিকার আছে, আবার যারা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন তাদেরও অধিকার আছে প্রতিবন্ধকতার মুখে না পড়ার। সেটি আমরা নিশ্চিত করব।
ড. খ মহিদ উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজের ব্যানারে গত ৬ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করেছেন। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। সাধারণ মানুষ, অ্যাম্বুলেন্স, বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠান, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আমরা শুরু থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, যেন সবকিছু স্বাভাবিক থাকে।
‘আন্দোলনের ব্যাপারে হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কোটা ব্যবস্থা থাকবে না মর্মে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। সেটির ব্যাপারে গত ৫ জুলাই একটি রায় আসে। এরপর বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি শুরু হয়। আপিল বিভাগ থেকে চার সপ্তাহের জন্য সেই নির্দেশনা স্থগিত করা হয়েছে। অর্থাৎ জনপ্রশাসনের সেই পরিপত্র বলবৎ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একত্রিত হয়ে নতুন করে আন্দোলন করার আর কোনো অবকাশ বা প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।’
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, যারা আন্দোলন করছেন, তাদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা ও ভালোবাসা আছে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রচলিত আইন ও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে আমরা বাধ্য। ছাত্ররা শিক্ষিত, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আমি অনুরোধ করব, তারা যেন আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর মানুষকে দুর্ভোগ দিয়ে কোনও কর্মসূচি না দেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ, আর কোথাও নামবেন না।
তিনি বলেন, গতকাল ২১টি পয়েন্টে তারা অবস্থান নিয়েছিলেন। আমরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে তাদের মোকাবিলা করেছি, কথা বলেছি। এটা মনে রাখতে হবে যে, ৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নগরবাসীর নিরাপত্তা, চলাফেরা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বাধ্য। কাজেই আমরা আশা করব, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কী আবেদন, সর্বোচ্চ আদালতের যে নির্দেশনা... তারা মানবেন। আদালতের নির্দেশনাও শিক্ষার্থীদের পক্ষেই আছে।
এসময় তিনি চলমান এইচএসসি পরীক্ষা, রথযাত্রা ও আশুরাকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি না দিতে আহ্বান জানান।
আন্দোলনের আর কোনো যৌক্তিকতা নেই উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা শহরে এইচএসসি পরীক্ষা চলছে, গত ৭ জুলাই রথযাত্রা হয়েছে, পুলিশকে প্রচণ্ড প্রেসার নিতে হয়েছে। এরপর আবার রথযাত্রা আছে, আশুরার অনুষ্ঠান আছে। যেহেতু এটা সেটেল হয়ে গেছে, সুতরাং ফারদার কোনো কর্মসূচি দিয়ে জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করবেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা শুনছেন, তারা যেন সহকর্মীদের জানিয়ে দেন, তাতে আমাদের জন্য, তাদের জন্য সবার জন্যই মঙ্গল।
(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/এলএম/ইএস)