টানা বর্ষণে পানিবন্দি কক্সবাজার, পাহাড় ধসে নিহত ৩
প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০২৪, ২১:৩০
টানা ভারী বর্ষণে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের রাস্তাঘাট, অলিগলিসহ বহু বাসাবাড়ি ও অফিস আদালতে পানি প্রবেশ করেছে। গত দুই দিন ধরে অব্যাহত ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ।
এদিকে ভারী বর্ষণের কারণে বৃহস্পতিবার পৃথক সময়ে পাহাড় ধসে কক্সবাজার সদরে ৩ জন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জমিলা বেগম (৩০), মো. হাসান (১০) ও কক্সবাজার সদরের মুহুরি পাড়ার লায়লা বেগম (৪৫)। এ ঘটনায় লায়লা বেগমের শিশু সন্তানও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার বিকাল ৩টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট ২৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামীকালও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন শহর ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে রয়েছে। বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সব শ্রেণির মানুষ। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরের কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা এলাকা, বাজারঘাটা, বার্মিজ মার্কেট, পেশকারপাড়া, হাশিমিয়া মাদরাসা, পাহাড়তলী, নুরপাড়া, সিটি কলেজ ও বৌদ্ধ মন্দির সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি হয়েছে।
শহরের নিচু এলাকাগুলো এখন পানিতে থই থই করছে। পানি না কমায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শহরবাসী। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে কক্সবাজার পৌরসভা কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
পাহাড়তলীর ফয়সাল আহমেদ বলেন, বুধবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে তার বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বৃষ্টির পানি তাদের ঘরে ঢুকে পড়ায় আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই অবস্থা তার বাড়ির আশপাশের অনেকের।
তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, পানিবন্দি মানুষকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলরদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয়দের মতে, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার বিভিন্ন উদ্যোগ থাকলেও তা কোনো কাজে আসছে না। প্রতি বছর জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে সংস্থাটি। কিন্তু তার তেমন কোনো সুফল মিলছে না। বৃষ্টি হলেই শহরের প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি পর্যন্ত তলিয়ে যাচ্ছে পানিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেলো কয়েক বছরে নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হয়েছে কক্সবাজার পৌরসভায়। সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ এবং সংস্কারসহ এসব কাজে ব্যয় হয়েছে ১৪৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। কিন্তু এবার বর্ষার শুরু থেকেই শত শত কোটি টাকার এসব উন্নয়ন কাজে আসছে না স্থানীয়দের।
বৃষ্টিতে সড়কের ওপর জমেছে হাঁটু পরিমাণ পানি। ফলে চলছে না কোনো যানবাহন। আর ড্রেনের পানি ঢুকে পড়েছে পর্যটন শহরের দোকান ও হোটেলের ভেতর।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ড্রেনে ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাটের কারণে এমন দুরবস্থা। এছাড়া সময়মতো ড্রেন পরিষ্কার না করাকেও দুষছেন তারা।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলমান বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে জলাবদ্ধতায় আরও নাকাল হবে পৌরবাসী।
তবে পৌরসভা সংশ্লিষ্টরা জানান, শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে আরও মাসখানেক আগ থেকেই কাজ শুরু করা হয়েছে। এখন সম্ভাব্য জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাগুলোর ড্রেন, নালা, খাল পরিষ্কারে কাজ চলছে। আর যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা বেশি হয়, তা সমাধানে আলাদা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
আগামী শনিবার বিকাল পর্যন্ত এভাবে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, গেল ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ২৪৯ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ ও কাল দুদিনই ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/পিএস)