লাগামহীন বাজারে দিশাহারা মানুষ
প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০২৪, ১৪:২৮ | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ১৫:২৮
বিক্রেতাদের নিত্যনতুন অজুহাতে প্রতি সপ্তাহেই বাজারে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়ে গেছে মাছ, মাংস ও শাক-সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম।
বিক্রেতারা বলছেন, ভারী বৃষ্টির কারণে গ্রামে সবজির উৎপাদন কম। যার কারণে সরবরাহও কম। এর ফলে সব ধরনের সবজির দাম চড়া। আর ক্রেতারা বলছেন, বছরজুড়ে নানা অজুহাতে ক্রেতাদের পকেট কাটা হচ্ছে। সর কারের উচিত বাজারের প্রতিটি পণ্যেই নজরদারি বাড়ানো।
এদিন বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা যায় টমেটো। গত সপ্তাহের ব্যবধানে এই সপ্তাহে টমেটো কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০- ২০০ টাকায়। মানভেদে প্রতিকেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৫০- ১৭০ টাকায়, শসা ৮০-১২০ টাকায়, কাঁচা মরিচ ২৬০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে হঠাৎ করে বেগুনের দাম কেজিতে ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। আজ বাজারে লম্বা বেগুন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৮০-১০০ টাকায়। আর সবুজ গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০- ১০০ টাকায়। কালো গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
আজ বাজারে প্রতিকেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, কাঁকরোল ৮০-৯০ টাকায়, পেঁপে ৫০-৬০ টাকায়, ঢেঁড়স ৭০- ৮০ টাকায়, পটল ৫০-৬০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৬০-৮০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০-৮০ টাকা, বরবটি ১০০- ১২০ টাকায়, কচুর লতি ৮০- ১০০ টাকায়, কচুরমুখী ১০০- ১২০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকায়। প্রতিটি লাউ ৭০- ৮০ টাকায়, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ফুলকপি ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
সব সবজির ভিড়ে কম যাচ্ছে না শাকের দামও। আজ বাজারে বাজারে প্রতি আঁটি লাউ শাক ৫০ টাকা, পুঁই শাক ৫০ টাকা, ডাটা শাক ২০ টাকা, লাল শাক ৩০ টাকা, পাট শাক ৩০ টাকা, কচু শাক ২০ টাকা, শাপলা ২০ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা, ডাটা ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা দরে। যা কয়েকদিন আগেও ছিল ৫০ টাকা করে। এছাড়া খুচরা পর্যায়ে কাচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকায়। তবে সামান্য দাম কমে রসুন ২২০ টাকা ও আদা বিক্রি হচ্ছে ২৬০-৩০০ টাকায়।
এদিকে, গত সপ্তাহে মুরগির দাম কিছুটা কমলেও চলতি সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে দাম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৭০০-৭৩০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৬০-২৮০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। আর প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩২০ টাকায়। এছাড়া প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়।
এদিন কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০-৮০০ টাকায়। খাসির মাংস প্রতিকেজি এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়।
এদিকে, স্বস্তি নেই মাছের বাজারেও। প্রায় সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ২০-৫০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০-২৩০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০-২৪০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৬৫০ টাকা ও চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। এছাড়া, আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কোরাল ৭০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ও আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এই বাজারের নিয়মিত ক্রেতা ফয়সাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘লাল শাক ছিল ১০ টাকা করে। সেটা আজ কিনতে হচ্ছে ৩০ টাকা করে। বাচ্চাকে খাওয়াব বলে দুই আঁটি লাল শাক কিনেছি ৬০ টাকায়। আমি তো কিনতে পারছি, কিন্তু যাদের ইনকাম কম তারা শাক-ভাতও খেতে পারবে না। শাক-ভাতেও এখন স্বস্তি নাই। ’
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না; ফলে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/এলএম)