হামাসের সামরিক কমান্ডার কে এই মোহাম্মদ দেইফ? যাকে হত্যা করতে মরিয়া ইসরায়েল
প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২৪, ১৩:৪৯
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সমস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দেইফ, তাকে হত্যার আরেকটি ইসরায়েলি প্রচেষ্টা থেকে রক্ষা পেয়েছেন এবং ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন গোষ্ঠীর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।
শনিবার গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের ‘নিরাপদ অঞ্চল’ আল-মাওয়াসি এলাকায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ৯০ ফিলিস্তিনি নিহত ও প্রায় ৩০০ জন আহত হয়েছেন। পরে ইসরায়েলের বাহিনী দাবি করে, আল-মাওয়াসি ক্যাম্পে বিমান হামলার লক্ষ্য ছিল মোহাম্মদ ডেইফকে হত্যা করা।
ইসরায়েলের এমন দাবির পরই রবিবার হামাসের ওই কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, খান ইউনিসের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ডেইফকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, তবে তিনি সেখান থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ ভালো আছেন এবং হামাসের সামরিক শাখার কার্যক্রম সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন।’
এদিকে হামাসের দাবির প্রতিক্রিয়ায়, ইসরায়েলের চিফ অফ দ্য জেনারেল স্টাফ হার্জি হালেভি রবিবার একটি টেলিভিশন বিবৃতিতে বলেছেন, ‘হামাস তাদের একটি কম্পাউন্ডে বিমান হামলার ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করার চেষ্টা করছে। শিগগিরই আদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’
কে এই মোহাম্মদ দেইফ?
১৯৬৫ সালে খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ দেইফ, যার আসল নাম মোহাম্মদ মাসরি, ১৯৯০-এর দশকে হামাসের সামরিক শাখা- কাসাম ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন এবং ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাকে চিহ্নিত করেছে ইসরায়েলি কতৃপক্ষ। এ হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে কমপক্ষে ১২শ জন নিহত হয়েছিল। এছাড়া হামাসের টানেলের নেটওয়ার্ক এবং অস্ত্র ও বোমা তৈরির কার্যক্রম উন্নয়নে তিনি ব্যপক ভূমিকা রেখেছেন বলে মনে করা হয়।
১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা বা ফিলিস্তিনি বিদ্রোহের সময় হামাসে যোগদানের পর তিনি মোহাম্মদ দেইফ নামে পরিচিত হন। আরবীতে দেইফ অর্থ ‘দর্শক’ বা ‘অতিথি’।
তিনি গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে বিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যেখানে তিনি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং জীববিদ্যা অধ্যয়ন করেছেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদন কমিটির প্রধান ছিলেন এবং প্রায়শই মঞ্চে অভিনয় করতেন।
১৯৮৯ সালে প্রথম ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার উত্তেজনার সময় তাকে ইসরায়েল গ্রেপ্তার করে এবং ১৬ মাস আটকে রাখার পর মুক্তি দেয়। ২০০২ সালে ইসরায়েল কাসেম ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠাতা নেতা সালাহ শেহাদেহকে হত্যা করার পর সামরিক গোষ্ঠীটির প্রধান হন দেইফ। এরপর থেকেই তাকে হত্যার জন্য বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা চালায় ইসরায়েল।
রিপোর্ট অনুসারে, ইসরায়েলের একটি হত্যা প্রচেষ্টায় ডেইফ একটি চোখ হারিয়েছিলেন এবং একটি পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন।
এছাড়া, ২০১৪ সালের আগস্টে গাজার একটি বাড়িকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় দেইফের স্ত্রী এবং সাত মাস বয়সী ছেলে নিহত হয়।
এদিকে গত মে মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে) গত ৭ অক্টোবরের হামলার জন্য দেইফ সহ হামাসের তিন নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
সূত্র: আল জাজিরা
(ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/এমআর)