এবার চিত্রনায়িকা ববির বিরুদ্ধে ফ্লোর দখলের পাল্টা অভিযোগ

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০২৪, ১৪:১০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববিসহ তার ঘনিষ্ঠ আবুল বাশারের বিরুদ্ধে এবার ফ্লোর দখলের পাল্টা অভিযোগ করলেন ভবনটির মালিক শাহিনা ইয়াসমিনের আইনজীবী ব্যারিস্টার খালেদ মাহমুদুর রহমান আদনান।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিনেত্রী ববি ও তার মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা গুলশানের ‘ওয়াইএন সেন্টার’-এর ষষ্ঠ তলার ফ্লোর দখল করার জন্য হামলা-মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। এ ব্যাপারে মামলা করার পরও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী ভবনের মালিক শাহিনা ইয়াসমিন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গুলশান-২ এর ১১৩ নম্বর সড়কের ৬/এ-তে অবস্থিত ‘ওয়াইএন সেন্টার-এর একটি ফ্লোর দখলের অভিযোগে থানায় মামলা দায়েরের পরও অবৈধ দখলদাররা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। দখলকৃত ফ্লোরটি উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

আইনজীবী খালেদ বলেন, রাজধানীর গুলশানের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিলাসবহুল ওয়াইএন সেন্টারের লেভেল- ৬ ফ্লোরটি আমান উল্লাহ আমান নামের একজনের কাছে ভাড়া দেন ভবনের মালিক শাহিনা ইয়াসমিন। গত ২৩ মার্চ মালিক ও ভাড়াটিয়ার উভয় পক্ষের চুক্তির মাধ্যমে ফ্লোরটিতে একটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন আমান।

কিন্তু ব্যবসায় মন্দাভাব চলায় একপর্যায়ে তিন মাসের ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বকেয়া পড়ে। এ জন্য ভাড়া পরিশোধ করতে চিঠি দেয় মালিকপক্ষ। কিন্তু আমান ভাড়া পরিশোধ না করে এবং চুক্তি ভঙ্গ করে ও মালিকপক্ষকে না জানিয়ে গত মে মাসে রেস্টুরেন্টের আসবাবপত্র ববি ও তার সহযোগী বাশারের কাছে বিক্রি করেন।

তিনি আরও বলেন, এরই প্রেক্ষিতে গত ৮ মে ভাড়াটিয়া আমানের পক্ষে চিত্রনায়িকা ববি ও আবুল বাশার হঠাৎই ভবনের ম্যানেজার জয়নাল আবেদীন ওরফে জয়ের কাছে বকেয়া এক মাসের ভাড়া দেন। ম্যানেজার ববির অনুরোধে তার নাম লিখে রিসিট কেটে টাকা নেন। তবে ভাড়া দেওয়ার সময় চিত্রনায়িকা ববি ভবনের সার্ভিস চার্জ দেননি। সেই রিসিটের ওপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন সময় ভবনে নিয়মিত যাওয়া-আসা ও বিভিন্ন অজুহাতে ভবনের অন্যান্য ফ্লোরের ভাড়াটিয়া, নিচের সিকিউরিটি গার্ড ও মালিকপক্ষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন আবুল বাশার।

এ ব্যাপারে গত ১৩ জুন মালিকপক্ষ এবং পরদিন ১৪ জুন আবুল বাশার গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। দুই পক্ষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মীমাংসার জন্য গত ১৫ জুন সব পক্ষকে থানায় ডাকেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)। এ ঘটনায় মালিকপক্ষ নির্ধারিত সময় থানায় হাজির হলেও চিত্রনায়িকা ববি ও আবুল বাশার অনুপস্থিত ছিলেন।

আইনজীবী আরও বলেন, ভুক্তভোগী ভবন মালিক রিট পিটিশন নং: ৯০৩৮ / ২৪’ এ গত ১৫ জুলাই মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের ‘সার্টিফাইড কপি’ সংগ্রহ করে বুধবার গুলশান থানা কর্তৃপক্ষের কাছে সশরীরে পৌঁছে পুনরায় সংশ্লিষ্ট থানার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদয় সহযোগিতা প্রার্থনা করেছেন।

এর আগে গত ১ জুলাই একই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন চিত্রনায়িকা ববি। তিনি বলেন, ‘সৎভাবে জীবনযাবন অব্যাহত রেখে আর্থিক সচ্ছলতার আশায় আমি গুলশান-২ এর ১১৩ নম্বর রোডের ওয়াই এন সেন্টারের একটি রেস্টুরেন্ট ক্রয় করি। রেস্টুরেন্টে অপারেশন পার্টনার হিসেবে রয়েছেন আমার পূর্বপরিচিত মির্জা বাশার। আগের রেস্টুরেন্টের মালিক আমানের সঙ্গে তার রেস্টুরেন্টের সমুদয় আসবাবপত্র (ইন্টেরিয়র ও অন্যান্য) ৫৫ লাখ টাকা মূল্য ধরে একটি চুক্তি হয়।’

‘একই সময়ে রেস্টুরেন্ট ভবনের (বিল্ডিং) মালিকের স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিন ও ছেলে জাওয়াদ আল মামুনের সঙ্গে ভবন রেস্টুরেন্ট মালিকসহ আলোচনা করি। তখন শাহিনা ইয়াসমিন ও জাওয়াদ রেস্টুরেন্টটি আমাকে ভাড়া নিতে উৎসাহিত করেন এবং চলমান রেস্টুরেন্ট হস্তান্তর করলে তারা পরবর্তী সময়ে আমাদের নামে নতুন চুক্তিপত্র করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তাদের প্রতিশ্রুতির পর আমরা আমানকে ১৫ লাখ টাকা প্রদান করি এবং টাকা পাওয়ার পর দিন আমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী তাকে দুটি চেকও প্রদান করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘গত এপ্রিল মাসে আমান আমাদের কাছে রেস্টুরেন্ট হস্তান্তর করেন। আমরা এপ্রিল থেকে রেস্টুরেন্টের ভাড়া প্রতি মাসে আড়াই লাখ ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ পরিশোধ করছি। ভবনের মালিক আমাদের নামে ভাড়া জমা নিয়ে রসিদও দেন।’

‘রেস্টুরেন্টে ওঠার পর আমরা ডেকোরেশন পরিবর্তনের কাজ শুরু করি। যাতে প্রায় ১ মাস সময় লাগে। ডেকোরেশনে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়। এ পর্যায়ে আমরা রেস্টুরেন্ট পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করি এবং ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য আমরা ভবনের শাহিনা ইয়াসমিন ও জাওয়াদ আল মামুনকে চুক্তিপত্র, ফায়ার সেফটি ও বাণিজ্যিক অনুমতির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়ার অনুরোধ করি।’

এসময় ববি বলেন, ‘নানা ঘটনার পর আমরা বুঝতে পারি, আমান, শাহিনা ও জাওয়াদ মিলে আমাদের সঙ্গে এক ভয়াবহ প্রতারণা করেছেন। তারা অবৈধ রেস্টুরেন্ট বাঁচাতে না পারার ভয়ে বিক্রি করে টাকা তুলে নেওয়ার ফাঁদ পাতেন। সেই ফাঁদে আমাদের ফেলা হয়েছে।’

নিজের অর্থ খরচ করে ব্যবসা করতে নেমে উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন দাবি করে চিত্রনায়িকা ববি বলেন, ‘আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে।’

(ঢাকা টাইমস/১৮জুলাই/জেবি/এজে)