ট্রাম্পকে টেক্কা দিতে পারবেন কমলা?
প্রকাশ | ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৬:২০ | আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৬:৪২
আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তবে যত দিন যাচ্ছে, ততই দেশটির রাজনীতিতে নতুন নতুন সমীকরণ আসছে। ইতোমধ্যেই নিজ দলের নেতাদের চাপে নির্বাচনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একই সঙ্গে তার উত্তরসূরি হিসেবে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নাম প্রস্তাব করেছেন তিনি।
গত রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর পর থেকেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে কমলা হ্যারিসের মনোনয়নের পথ একটু একটু করে প্রশস্ত হচ্ছে।
ডেমোক্র্যাটদের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতার সমর্থন পেলেও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দলের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াইতে মনোনীত হননি কমলা। এখন তার দলের কাছ থেকে এই মনোনয়ন অর্জন করার বিষয়টা যদি সহজ হয়েও যায়, তাহলেও কমলার সামনে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ এখনও আসা বাকি। আর এই চ্যালেঞ্জ হল নভেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করা।
সাম্প্রতিক জনমত জরিপ বলছে, কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছেন। ঠিক যে অবস্থানে জো বাইডেন নিজেকে দেখতে পেয়েছিলেন তার প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার মতো ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ঘোষণার করার আগে।
দলের শীর্ষস্থানীয় সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের সকলেই প্রায় মনোনয়নের বিষয়ে কমলার প্রতি সমর্থন দেখিয়েছেন। হাউসের প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি, যাকে ডেমোক্র্যাটিক রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসাবে মনে করা হয়, তিনিও এই তালিকায় রয়েছেন। ফলে নভেম্বর মাসের নির্বাচনে একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যাবে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের কাছে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ হল- ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি বিদ্বেষকে ‘পুঁজি’ হিসাবে ব্যবহার করা, প্রধান সুইং স্টেটগুলোতে মধ্যপন্থী ভোটারদের আকৃষ্ট করা এবং ডেমোক্র্যাটিক বেসকে শক্তিশালী করে তোলা।
প্রসঙ্গত, ‘সুইং স্টেট’ বা ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেট’ হলো এমন কয়েকটা মার্কিন অঙ্গরাজ্য, যেগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর জয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কমলা হ্যারিসের প্রচার শিবিরের তথ্য অনুযায়ী, জো বাইডেনের প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভাইস প্রেসিডেন্ট নতুন অনুদান হিসেবে ৮ কোটি ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছেন, যা এবারের নির্বাচনে কোনও প্রার্থীর একদিনে সংগ্রহ করা অনুদানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি, বাইডেন-হ্যারিসের তহবিল থেকে ‘উত্তরাধিকার সূত্রে’ পাওয়া প্রায় ১০ কোটি ডলার কমলাকে তার আসন্ন নির্বাচনি প্রচারের জন্য একটা মজবুত আর্থিক ভিত্তি দিয়েছে।
এদিকে কমলা যদি আনুষ্ঠানিকভাবে তার দলের মনোনয়ন পান, তাহলে এই নির্বাচনে রিপাবলিকানরা তাদের প্রতিপক্ষ 'ডেমোক্র্যাটদের' বিরুদ্ধে যে সবচেয়ে কার্যকর আক্রমণ চালিয়ে এসেছিল তার একটা মোক্ষম উত্তরও দিতে পারবেন এবং সেটা হলো – প্রার্থীর বয়স।
গত কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প তার প্রচারের সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন দুর্বল এবং সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন এমন অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন।
জুন মাসের শেষের দিকে নির্বাচনি বির্তকে বাইডেনের খারাপ ‘পারফরম্যান্সের পর এই আক্রমণ আরও তীব্র হয়। দলের অন্দরেও প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য ৮১ বছরের বাইডেনের ওপর চাপ বাড়তে থাকে।
অন্যদিকে কমলা হ্যারিসের বয়স ৫৯। পূর্ণ উদ্যমী হয়ে তিনি প্রচারের মাঠে নামবেন বলেই অনুমান করা যেতে পারে এবং ট্রাম্প এতদিন যে বয়সের বিষয়কে সামনে রেখে বাইডেনকে আক্রমণ করে এসেছিলেন, তার একটা মোক্ষম জবাব দিতে পারবেন।
শুধু তাই নয়, এই বয়সের বিষয়টাকেই তিনি চাইলে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। কারণ জিতলে, ৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্পই হবেন এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট।
অন্যদিকে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের কাছ থেকে সমর্থন পেতে সক্ষম হতে পারেন কমলা, যারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাইডেনের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন বলে জনমত জরিপে উঠে এসেছিল।
অন্যান্য সংখ্যালঘু এবং তরুণ ভোটারদের কাছ থেকে আরও সমর্থন পেতে পারেন কমলা, যা ২০০৮ এবং ২০১২ সালে বারাক ওবামার নির্বাচনি সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
দেশটিতে গর্ভপাতের সমর্থনে কথা বলেছেন কমলা, যা সাম্প্রতিক নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটের পক্ষে ইতিবাচক বলে প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে, এই ইস্যুতে বাইডেনকে কখনও কখনও অনিচ্ছুক সমর্থক হিসেবে দেখা গেছে।
এছাড়া অতীতে প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন কমলার প্রার্থীপদকে আরও মজবুত করবে। কর্মজীবনে তার এই আইনি ব্যাকগ্রাউন্ড তাকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রচারের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
সূত্র: বিবিসি
(ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/এমআর)