লাভ বেশি, বাদাম চাষে ঝুঁকছেন দিনাজপুরের কৃষকরা
উৎপাদন খরচ কম হওয়াসহ ফসলের আশানুরূপ লাভ পাওয়ায় চিনাবাদাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষকরা। অন্যান্য ফসলের চেয়ে চিনাবাদামের পরিচর্যা ও উৎপাদন খরচ কম। তাই আবহাওয়া ও জমির অবস্থা অনুকূলে থাকায় ফুলবাড়ী উপজেলার অনেক কৃষক এবার অন্যান্য জমি ছাড়াও পতিত জমিতেও চিনাবাদাম চাষ করেছেন।
কৃষকরা জানান, মার্চ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাদাম রোপণ করা হয়, আর জুন থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাদাম তোলা হয়। বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। তুলনামূলক কম পরিশ্রমে বেশি লাভ পাওয়ায় উপজেলার কৃষকরা অন্য ফসলের চেয়ে বাদাম চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে ক্ষেতে এবার উৎসবমুখর পরিবেশে বাদাম তুলছেন কৃষক।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কৃষকদের বাদাম চাষে আগ্রহী করতে কৃষি বিভাগ থেকে ছয়জন কৃষকের প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে ১ দশমিক ৬ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করানো হয়েছে। এসব প্রদর্শনী প্লটের কৃষককে উন্নত জাতের বাদাম বীজ, জৈব জাতের বালাই নাশকসহ ক্ষেত পরিচর্যার জন্য নগদ দুই হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।
কৃষি বিভাগের ৬টি প্রদর্শনী প্লটের বাইরেও ব্যক্তিবিশেষের উদ্যোগে বাদাম চাষ হচ্ছে। তবে উপজেলার পৌরসহ আলাদিপুর, খয়েরবাড়ী, দৌলতপুর ও শিবনগর ইউনিয়নের ছোট যমুনা নদীর দুই পাশের বালুমিশ্রিত মাটি, দো-আঁশ ও বেলে জাতীয় মাটিতে বাদাম চাষ হচ্ছে।
এদিকে ব্যক্তি উদ্যোগে উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের ছোট ভিমলপুর গ্রামের আছির উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ও তার স্ত্রী গোলাপী বেগম দম্পতি এ বছর ৩৭ শতাংশ জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। এরই মধ্যে বাদাম তোলাও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
কৃষক দম্পতি আব্দুর রাজ্জাক ও গোলাপী বেগম বলেন, নিত্যনতুন ফসল ফলানোর চেষ্টা থেকেই বাদাম চাষের উদ্যোগ। পরীক্ষামূলকভাবে ৩৭ শতাংশ জমিতে বাদাম রোপণ করা হয়েছিল। আবাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাদামের উৎপাদন এবং লাভ দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন।
সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত বাদাম চাষিরা জানান, প্রত্যেককেই ১৮ শতাংশ জমিতে বারি বিনা বাদাম-৬ জাতের বাদাম চাষ করছেন। নতুন ফসল হিসেবে ফলন ভালো হওয়ায় লাভও ভালো হবে। ক্ষেতের বাদাম তুলতে শুরু করেছেন। বাজারে বাদামের চাহিদা ও দাম দুটোই থাকায় উৎপাদিত বাদাম বিক্রি নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। বাজারে প্রতি কেজি বাদাম ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, উচ্চমূল্যের ফসল বাদাম। এই ফসলের নিবিড়তা এবং তেল জাতীয় ফসলের চাষ বৃদ্ধিকরণের লক্ষ্যে ব্যক্তিবিশেষের চাষাবাদের পাশাপাশি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ৬ জন কৃষকের মাধ্যমে প্রদর্শনী প্লটে প্রায় ১ দশমিক ৬ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। এতে কৃষকরা আশানুরূপ লাভ পাচ্ছেন।
প্রতি হেক্টরে আড়াই থেকে তিন মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এ বছর তার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, চিনাবাদামের বীজে প্রায় ৫০ ভাগ তেল এবং ২২ থেকে ২৯ ভাগ আমিষ রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২৬জুলাই/মোআ)