হামাস নেতা হানিয়াহ হত্যায় বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০২৪, ১৭:১৪| আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৪, ১৮:১২
অ- অ+

ইরানের রাজধানী তেহরানে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহ নিহত হয়েছেন। হানিয়ার মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্ব নেতারা ও সংগঠনগুলো।

হামাস

ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার কিছুক্ষণ পর হামাস পরিচালিত আল-আকসা টিভিতে গোষ্ঠীটির জ্যেষ্ঠ নেতা মুসা আবু মারজুক এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের ভাই, নেতা, মুজাহিদ এবং (গাজার) সরকারপ্রধান ইসমাইল হানিয়া ইহুদি জায়নবাদীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। এটি একটি ‘কাপুরুষোচিত কাজ’, এই হত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদেরকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস, মহান ফিলিস্তিনি জনগণ, আরব ও ইসলামিক জাতি এবং বিশ্বের সমস্ত মুক্ত জনগণ তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছে।”

তিনি আরও বলেন, ‘হামাস একটি ধারণা এবং একটি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি নয়। ত্যাগ নির্বিশেষে হামাস এই পথেই চলবে এবং আমরা বিজয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।

অন্যদিকে হামাসের সিনিয়র মুখপাত্র সামি আবু জুহরি বলেছেন, ‘ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার মাধ্যমে যে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায় শত্রুরা, তা কখনো পূরণ হবে না।’

জুহরি আরও বলেছেন, হামাস ‘জেরুজালেমকে মুক্ত করার জন্য উন্মুক্ত যুদ্ধ চালাবে এবং এর জন্য যেকোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত।’

ইসরায়েল

যদিও হানিয়ার মৃত্যুর দ্বায় স্বীকার বা এ বিষয়ে ইসরায়েল সরকার এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে দেশটির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মন্ত্রী আমিচাই ইলিয়াহু সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন, ‘এই নোংরা পৃথিবীকে পরিষ্কার করার এটাই সঠিক উপায়। আর কোনো কাল্পনিক শান্তি বা সমর্পণ চুক্তি নয়। আর কোনো করুণা নেই।’

ইরান

মূলত মঙ্গলবার মাসুদ পেজেশকিয়ানের ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টে হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই তিনি তেহরান গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনীর সঙ্গেও দেখা করেছিলেন।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল প্রেস টিভি জানিয়েছে, তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন ইসমাইল হানিয়াহ। বুধবার স্থানীয় সময় ভোরে তার বাসভবনে একটি হামলা হলে হানিয়াহ ও তার এক দেহরক্ষী নিহত হন।

হানিয়ার মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান একটি এক্স পোস্টে বলেছেন, ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সম্মান, গৌরব এবং মর্যাদা রক্ষা করবে এবং সন্ত্রাসী হানাদারদের তাদের কাপুরুষোচিত কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা করাবে।’

এছাড়াও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনী একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘অপরাধী ও সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসক আমাদের বাড়িতে আমাদের প্রিয় অতিথিকে শহীদ করেছে এবং আমাদের দুঃখিত করেছে। কিন্তু এর মাধ্যমে তারা নিজের জন্য কঠোর শাস্তির ভিত্তি তৈরি করেছে।’

লেবাননের হিজবুল্লাহ

হানিয়ার মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হামাস এবং ইরান-সম্পর্কিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।

টেলিগ্রামে পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি বলছে, ‘আমরা হিজবুল্লাহর হামাস আন্দোলনে আমাদের প্রিয় ভাইদের সঙ্গে এই মহান নেতাকে হারানোর বেদনার অনুভূতি ভাগ করে নেই।’

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ

ফিলিস্তিনি সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াফা নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হানিয়াহকে হত্যার নিন্দা এবং ফিলিস্তিনিদেরকে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডকে কাপুরুষোচিত কাজ এবং একটি বিপজ্জনক অগ্রগতি বলে বর্ণনা করেছেন।

ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ

হানিয়ার হত্যার প্রতিক্রিয়ায় হামাসের মিত্র ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদও।

গোষ্ঠীটির ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আল-হিন্দি লেবাননের টিভি স্টেশন আল মায়াদিনকে বলেছেন: ‘এই হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী- বিশেষ করে হামাসকে উদ্দেশ্যে করা হয়নি, এখানে ইরানকেও আঘাত করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল পতনের দ্বারপ্রান্তে, তাদের প্রতিক্রিয়াগুলো বিভ্রান্তি এবং তার কোনো লক্ষ্য অর্জনে অক্ষমতা প্রতিফলিত করে।’

এছাড়া ফিলিস্তিনি রেজিস্টেন্স (প্রতিরোধ) গোষ্ঠী হানিয়ার হত্যার প্রতিবাদে অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা এবং নাবলুসসহ বিভিন্ন শহরে একটি ‘সর্বাত্মক ধর্মঘট’ এবং গণবিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া

হানিয়ার হত্যার প্রতিক্রিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস বলেন, ‘এই ব্যক্তি ৭ অক্টোবরে ঘটে যাওয়া কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন, যে কর্মকাণ্ডের আমরা ক্রমাগত নিন্দা করে আসছি। তবে আমরা অবশ্যই নিশ্চিত করতে চাই, এই ঘটনায় যেন ওই অঞ্চলে আরও উত্তেজনা দেখতে না হয়, কারণ এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।’

চীন

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেছেন, ‘আমরা এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং দৃঢ়ভাবে এই হত্যাকাণ্ডের বিরোধিতা ও নিন্দা করছি। গাজায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করা উচিত।’

মালয়েশিয়া

হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের অবিলম্বে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া।

সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়ে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সকল পক্ষের গঠনমূলক সংলাপ এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য প্রয়োজন।’

কাতার

ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার তীব্র নিন্দা এবং এই ধরনের পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক ও মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে কাতার।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলছে, ‘এই হত্যাকাণ্ড এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ক্রমাগত লক্ষ্যবস্তু করার বেপরোয়া ইসরাইলি আচরণ এই অঞ্চলকে বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যাবে এবং শান্তির সম্ভাবনাকে ক্ষুণ্ন করবে।’

রাশিয়া

রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানভ বলেছেন, ‘এটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, যা এই অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’

তুরস্ক

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘হানিয়ার হত্যা আবারও প্রমাণ করে যে ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকারের শান্তি অর্জনের কোনো ইচ্ছা নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলকে থামাতে পদক্ষেপ না নিলে এই অঞ্চল আরও বড় সংঘর্ষের সম্মুখীন হবে।’

ইয়েমেনের হুতি

ইয়েমেনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতির সর্বোচ্চ বিপ্লবী কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আলী আল-হুতি বলেছেন, ‘ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যা করা একটি জঘন্য সন্ত্রাসী অপরাধ এবং আইন ও আদর্শ মূল্যবোধের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’

সূত্র: আল জাজিরা

(ঢাকাটাইমসস/৩১জুলাই/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ময়মনসিংহের ভালুকায় শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথের উদ্বোধন 
মুশফিক-রিয়াদরা মাঠ থেকে বিদায় না নেওয়ায় আক্ষেপ মিরাজের
পর্তুগালের প্রবাসী নারী উদ্যোক্তাদের ঈদ মেলা  
সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা