কাঠগড়ায় নায়ক আরিফিন শুভর বিবাহ বিচ্ছেদের পোস্ট
প্রকাশ | ০১ আগস্ট ২০২৪, ১১:২৭ | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১১:৩০
ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। ধর্মের ধার ধারেননি। কিন্তু হিন্দু ধর্মের অনুসারী অর্পিতা সমাদ্দারের সঙ্গে সংসারটা টিকিয়ে রাখতে পারলেন না ঢালিউড নায়ক আরিফিন শুভ। বুধবার রাতে ফেসবুকে দিয়েছেন বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা। শুভর সেই পোস্টকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন নেটজনতা।
কিন্তু কী লিখেছেন শুভ?
নায়ক লেখেন, ‘দেশের এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত কোনো কিছু জানাতে যথেষ্ট দ্বিধা ও সংকোচ বোধ করছি, তার পরও মনে হলো আপনাদের বিষয়টা জানানোর সময় এসেছে।’
‘আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমি আর অর্পিতা আমরা হয়তো বন্ধু হিসেবেই ঠিক আছি, জীবনসঙ্গী হিসেবে নয়। আমরা গত ২০ জুলাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, বন্ধুত্বটুকু নিয়ে দুজনের সম্মতিতে বাকি জীবন নিজেদের মতো করে বাঁচব।’
এরপরই কৃতজ্ঞতা ও ঋণ স্বীকার করেছেন প্রাক্তনের প্রতি। লিখেছেন, ‘অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পরও অর্পিতা আমার এবং আমার মায়ের জন্য যা করেছেন, সেটার জন্য তাঁর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ এবং চিরঋণী। মা চলে যাওয়ার পর জীবনটা একেবারেই শূন্য হয়ে গেছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা আমার সঙ্গে আছে, যেটা নিয়ে বাকি জীবনটা সুন্দর ও সুস্থভাবে বাঁচতে পারব।’
পোস্টের শেষে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনা নিয়ে শুভ লিখেছেন, ‘দেশের সাম্প্রতিক ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। সবার জীবনে শান্তি আসুক, দেশেও শান্তি ফিরে আসুক, এই কামনায়।’
পোস্টটি পড়ে নেটজনতা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রাক্তন স্ত্রী কীভাবে বন্ধু হয়? তাদের মত, এইটা তারকাদের একটা বাজে ট্রেন্ড হয়ে গেছে। বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণার সঙ্গে জানিয়ে দেন, তারা নাকি বাকি জীবন বন্ধু হয়ে থাকতে চান। কিন্তু কোন তারকা দম্পতির মাঝে বিচ্ছেদের পর বন্ধুত্ব টিকে আছে? এই প্রশ্ন সবার।
শুভর পোস্টের নিচে জাফর নামে এক নেটগেরিক মন্তব্য করেছেন, ‘জীবনসঙ্গী হিসাবে থাকতে পারলেন না আবার বন্ধু হিসাবে থাকবেন। এটা হাস্যকর।’ রতন মিয়া নামে একজনের মন্তব্য, ‘বন্ধু হয়ে থাকতে পারলেও বউ হিসাবে কেন পারলো না? তাহলে কি প্রশ্ন রয়ে গেল না??’
নাঈম মাহমুদ নামে এক নেটিজেন লিখেছেন, ‘যারা মানুষকে ভালোবাসা শেখায়, তাদের ঘরে ভালোবাসার বড়ই অভাব। দিনশেষে কোনো নায়ক-নায়িকাই সুখি না। ওই অবস্থান থেকে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত সুখি হতে পারে না। কারণ হারাম মানুষের সুখ-শান্তি কেড়ে নেয়। দিনশেষে ভালো হয়ে উঠুক বাংলাদেশ।’
মো. আনামুল হক নামে একজনের বিরক্তিমাখা মন্তব্য, ‘বড়লোকদের ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর তাদের কথাগুলো শুনতে খুবই ভালো লাগে। কারণ কথাগুলোতে অনেক রস পাওয়া যায়। হায়রে বন্ধুত্ব, সাড়ে ৯ বছর ধরে তারা বন্ধু ছিল কিন্তু সঙ্গী হতে পারল না। যতসব ন্যাকামি পোস্ট।’
রিংকন রুদ্র নামে একজন লিখেছেন, ‘ডিভোর্সের পরে আবার বন্ধু হয়ে থাকা যায় কীভাবে? বন্ধু হয়ে থাকতে পারলে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পাশে থাকতে পারবে না কেন! ভাওতাবাজি ছাড়েন, ডিভোর্স মানে এখানেই সমাপ্তি। নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা রইলো।’
আফরিন সেতু নামে এক নারী নেটগেরিক মন্তব্য করে লিখেছেন, তিনি এতদিন জানতেনই না যে, নায়ক আরিফিন শুভ বিবাহিত। তার ভাষায়, ‘আমি এই পোস্ট দেখার আগে জানতামই না আপনে বিবাহিত, সিরিয়াসলি। তাইতো ভাবতেসিলাম বন্ধু হয়ে থাকবে তার জন্য স্ট্যাটাস দিচ্ছে কেন? কমেন্ট সেকশন পড়ে বুঝলাম আপনি বিবাহিত ছিলেন, জীবনসঙ্গী থাকবেন না, ছেড়ে দিচ্ছেন, কিন্তু বন্ধু থাকবেন! আচ্ছা ঠিকাছে। কমেন্টকারী ভাইবোনদের ধন্যবাদ ভাঙাইয়া কওয়ার জন্য।’
শুভর বিবাহ বিচ্ছেদের পোস্টে অনেকে স্যাড রিঅ্যাক্ট দিয়েছেন। তাতে আপত্তি তুলে এইচএম আমিনুল ইসলাম নামে একজনের মন্তব্য, ‘এখানে এত স্যাড রিয়েক্ট-এর কী আছে?? মিডিয়ার মানুষ বিয়ে করেই ডিভোর্সের জন্য। এইটা তাদের কাছে একেবারে নরমাল ব্যাপার।’
প্রীতম সাহা নামে একজনের মন্তব্য, ‘আপনারা নাটকের বিয়া করেন কিসের জন্য? এক বছর কোনোভাবে কেটে গেলে আপনাদের মুড সুইং হয়, এরপর আপনারা সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে জানান দেন, আর একসাথে থাকতে পারবেন না। এখন বন্ধুত্বটাই টিকে থাকবে। বাহ ভাই বাহ। যখন একা থাকবেন, তখন সম্পূর্ণ একাই থাকবেন, কাউরে যোগ্য সম্মান দিয়ে ঘরে আনবেন, দুই দিন পর দেবেন ছেড়ে। এটা করার কোনো দরকার নাই।’
এভাবে বহু নেটিজেন আরিফিন শুভর বিবাহ বিচ্ছেদের পোস্ট দেখে সমালোচনায় মেতে উঠেছেন। কেউ কেউ আবার তাকে সমবেদনা জানিয়ে তার সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করেছেন।
২০১৫ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার অর্পিতা সমাদ্দারকে বিয়ে করেন আরিফিন শুভ। অর্পিতার বাড়ি কলকাতায়। বিয়ের বছরখানেক আগে তাদের পরিচয়। এরপর বন্ধুত্ব, ভালোলাগা ও ভালোবাসা। বছর না গড়াতেই ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় শুভ-অর্পিতার।
বিয়ের সময় অর্পিতা বলেছিলেন ‘অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’ শুভ বলেছিলেন ‘দুজনই চেয়েছিলাম আমাদের সম্পর্কের একটা পরিণতি হোক। একটা ভয়ও ছিল। আমি মুসলিম, অর্পিতা হিন্দু। ভেবেছিলাম পরিবার থেকে ঝামেলা হতে পারে। কিন্ত সে রকম কিছু ঘটেনি। দুই পরিবারের সিদ্ধান্তে আমরা বিয়ে করেছি।’
কিন্তু সংসার গড়ার সাড়ে ৯ বছরের মাথায় কী এমন ঝামেলা হলো যে এভাবে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে দিলেন রুপালি পর্দার বঙ্গবন্ধু। তা অবশ্য এখনো জানা যায়নি। সে ব্যাপারে কিছু জানাননি শুভ। মুখ খোলেননি তার প্রাক্তন অর্পিতাও। তবে চাপা তো কিছুই তাকে না। সেই সময়ের অপেক্ষা।
(ঢাকাটাইমস/০১আগস্ট/এজে)