যে কারণে নিষিদ্ধ জামায়াত-শিবির
প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪৭
সম্প্রতি দেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নামে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে। হত্যা করা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। আহত হয়েছেন বহু। সংঘাতে শিশুসহ ২০০ জনের বেশি প্রাণহানি ঘটেছে, যদিও সরকারের দাবি, নিহতের সংখ্যা ১৫০। সুযোগে বুঝে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভেতর ঢুকে পড়ে জামায়াত-শিবির। স্বাধীনতাবিরোধী এ দলটিই দেশে ব্যাপক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালায়, যার পরিণতি হলো অবশেষে ‘নিষিদ্ধ’।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারার ক্ষমতাবলে নিষিদ্ধ করা হয় দলটিকে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার যুক্তিসঙ্গ কারণ থাকলে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারবে। এখানে ‘সত্তা’ বলতে কোনো আইনি প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, বাণিজ্যিক বা অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী, অংশীদারী কারবার, সমবায় সমিতিসহ এক বা একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত যেকোনো সংগঠনকে বোঝায়।
যে কারণে নিষিদ্ধ হলো জামায়াত
জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্ব নাম জামায়াত-ই-ইসলামী, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং এর অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে (পূর্ব নাম ইসলামী ছাত্রসংঘ) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ ছাড়া এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। আপিল বিভাগ ওই রায় বহাল রেখেছেন।
এর আগে গত ২৬ জুলাই ১৪ দলের বৈঠকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও দলটির অঙ্গসংগঠন ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নেওয়া হয়। ওইদিন রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
১৪ দল মনে করে, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যে সন্ত্রাস এবং নাশকতা হয়েছে এর পিছনে জামায়াত-শিবির কলকাঠি নেড়েছে। ১৭ জুলাই থেকে ঢাকায় যে সন্ত্রাসী তাণ্ডব হয়েছে এর মূল কারিগর ছিল জামায়াত-শিবির।
বৈঠকে ১৪ দলের নেতারা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসী সংগঠন, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের বিচার হয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নির্বাচন কমিশন যেহেতু জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে সেজন্য এখন আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সময় এসেছে। কারণ একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী যে চরিত্র তা এখনো বদলায়নি।
বৈঠকে ১৪ দলের নেতারা জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব ১৪ দলের বৈঠকে পাস হয়।
উল্লেখ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনলে ৩৮টি দলের সঙ্গে সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকা জামায়াতে ইসলামীও নিবন্ধিত হয়। আইন অনুযায়ী শুধু নিবন্ধিত দলগুলোই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।
এরপর তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।
ওই রিটের প্রেক্ষিতে জারি করা রুলের শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের বেঞ্চ জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে রায় দেন। রায়ে সংবিধানের সঙ্গে দলটির গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়।
এরপর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে, যা গত বছরের ১৯ নভেম্বর খারিজ হয়ে যায়।
(ঢাকাটাইমস/০২আগস্ট/এফএ)