ফেসবুকে লাল ছবি দিয়ে কী বার্তা দিচ্ছেন বিশিষ্টজনেরা?
প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২৪, ১৪:২১ | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৪, ১৫:৪৫
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশির প্রোফাইলে লাল রঙের ছবি দেখা যাচ্ছে গত কয়েকদিন ধরে। বিশেষ করে ৩০ জুলাই থেকে এ ধরনের ছবি দিতে দেখা গেছে অনেককে। মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে এই রীতি শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে অনেক বিশিষ্টজনও নিজের প্রোফাইল এবং কভার ফটোতে লাল ছবি দিয়েছেন। এর মাধ্যমে কী বার্তা দিতে চাইছেন তারা?
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেসবুক প্রোফাইলে লাল ছবি দিয়েছেন বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট)। তার এই ছবিটি ১০ হাজারের বেশি বার শেয়ার হয়েছে এবং ১০ হাজার ২০০টির বেশি মন্তব্য করেছেন অন্য ব্যবহারকারীরা।
টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক শিহাব শাহীন ৩০ জুলাই বাংলাদেশের মানচিত্রসহ লাল ছবি দিয়েছেন প্রোফাইলে। রাজাকারদের পক্ষ নিলেন?— মন্তব্যের ঘরে একজনের এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এভাবে, ‘না ছাত্ররা নিজেদের রাজাকার বলছে না। ছাত্রদের কথা আমিও শুনি। যেদিন বলেছিল সেদিন ক্ষোভ থেকে বলেছিল। ওরা রাজাকার নয়। রাজাকার মানসিকতারও নয়। আপনি আর কথা বাড়াবেন না।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ফেসবুকের কভার ফটোতে লাল কাপড়ে মুখ বাঁধা ছবি দিয়েছেন গত ৩০ জুলাই। তিনি সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটির (এনসিসিএ) অন্যতম সদস্য এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে 'গণহত্যা' তদন্তে সম্প্রতি গঠিত ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’-এর উপদেষ্টা। তার লাল কভার ফটোতে অনেকে লাইক দিয়েছেন এবং কেউ কেউ মন্তব্যের ঘরে প্রশংসা করেছেন।
অভিনেত্রী অপি করিম প্রোফাইল পিকচারে লাল ছবি দিয়েছেন ৩০ জুলাই। লিখেছেন, ‘গোটা দেশটাই সংস্কারের প্রয়োজন!’
দৈনিক সমকালের পরিকল্পনা সম্পাদক ফারুক ওয়াসিফ প্রোফাইলে লাল ছবি দিয়েছেন। একটি পোস্টে ‘ছাত্রজনতার ঐক্যকে চোখের মণির মতো বাঁচাইতে হবে, যা বুঝলাম জানকবুল বুকে নিলাম’ শিরোনামে একটি লেখা দিয়েছেন তিনি।
জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন ৩০ জুন বাংলাদেশের মানচিত্রসহ লাল ছবি দিয়েছেন প্রোফাইলে। বিবরণে লিখেছেন, ‘সেই সে মিছিলে, তুমিও কি ছিলে, নাকি ছিল শুধু একা কেউ? জেনে রেখো আজ, একা এ আওয়াজ, হবে শত সহস্র ঢেউ! ~ সাদাত হোসাইন’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রোফাইলে লাল ছবি দিয়েছেন এবং কভার ফটোতে লাল কালিতে লিখেছেন, ‘চাইতে এলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার!’ । তার প্রোফাইল পিকচারের মন্তব্যের ঘরে অনেকে প্রশংসা করে মন্তব্য লিখেছেন।
কাজী আনিছ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে দৈনিক প্রথম আলোতে সাংবাদিকতা করতেন। সমাজের নানা অসঙ্গতির বিষয়ে তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব দেখা যায় নিয়মিত।
শুক্রবার সকালে এক ফেসবুক পোস্টে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক লিখেছেন, ‘বিষয়টা সামগ্রিক। কেউ কেউ সামগ্রিক বিষয়টাকে 'ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তির ঝাল' মেটাতে 'হাতিয়ার' হিসেবে ব্যবহার করছেন।
এরা সামগ্রিক বিষয়টাকে নষ্ট করে দেওয়ার চক্রান্তে নেমেছেন। 'জনসমর্থন'কে আলাদা করার চেষ্টা করছেন।
কেউ কথা বললে তাকে চুপ করিয়ে দেওয়ার যায় কীভাবে, তার জন্য 'ব্যক্তিগত ইস্যু'কে সামনে এনে হাজির করছেন। মিথ্যাচার করছেন। এটিও একটি সুদূরপ্রসারী সুচিন্তিত 'কন্সপিরেসি'।
এবং তা কোথা থেকে করছেন বা করা হচ্ছে, কে বা কারা করছেন, তা সুস্পষ্ট।
এই 'কীটপতঙ্গ' থেকে সাবধান থাকবেন। এরা চুপ থাকে। নীরব থাকে। কোথাও আলো দেখলেই এসে ভিড় করে হালকা তাফালিং করে। ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তির ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করে।
এটি 'ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তির ঝাল' মেটানোর সময়/হাতিয়ার নয়,
পিও ব্রাদার/সিস্টার...’।
(ঢাকাটাইমস/০২আগস্ট/কেএম)