শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হবিগঞ্জ, গুলিতে যুবক নিহত

প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২৪, ২০:১৭ | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৪, ২০:৩৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, হবিগঞ্জ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে রণক্ষেত্র হয়েছে হবিগঞ্জ শহর। আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মোস্তাক মিয়া (২৬)। এছাড়াও প্রায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপির কার্যালয় আগুনে পোড়ানো হয়।

শুক্রবার দুপুরে শহরের টাউন হল এলাকায় এই সংঘর্ষ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার বাদ জুমা শহরের কোর্ট মসজিদ চত্ত্বর ও অপর প্রান্তে খোয়াই নদীর তীরে নূরুল হেরা জামে মসজিদের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শহরের কোর্ট মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে আসছিলেন। এক পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সংহতি জানিয়ে শিক্ষার্থীদের গণমিছিলে যোগ দেন। এই মিছিলটি টাউন হল এলাকায় পৌঁছলে একই সময়ে চৌধুরী বাজার এলাকার মিছিলটিও টাউন হলে সামনে এসে একত্রিত হয়। এরপর আন্দোলনকারীরা টাউন হল এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। একই সময় তারা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু জাহির এমপির বাসভবনের সামনে রাখা ৪টি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকার পুড়িয়ে দেয়। তারা আওয়ামী লীগের সভাপতির বাসভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সেখানে একটি প্রাইভেট হাসপাতাল, কয়েকটি বিপণীবিতান ও দোকানপাটে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এরপর পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এর একপর্যায়ে শহরের তিনকোণা পুকুর পাড় এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন মোস্তাক। তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মমিন উদ্দিন চৌধুরী মোস্তাককে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত মোস্তাক মিয়া সিলেট টুকেরবাজার এলাকার মারুফ মিয়ার ছেলে। তিনি হবিগঞ্জ পিডিবিতে অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

হবিগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মমিন উদ্দিন চৌধুরী নিশ্চিত বলেন, মোস্তাক মিয়ার শরীরে বুলেটের আঘাত বলে মনে হচ্ছে। ডান হাতে একটি গুরুতর আঘাত আছে। পাশাপাশি বুকেও কিছু ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্ত হলে বিষয়টি নিশ্চিতভাবে জানানো যাবে। 

এদিকে সংঘর্ষ ঠেকাতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় বিজিবি, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী। পরে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরীর নেতৃবৃন্দ জড়ো হয়ে শহরের সিনেমা হল এলাকায় বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

হবিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগুনের খবর পেয়ে আমাদের দুইটি ইউনিট রওনা দিয়েছিল। কিন্তু রাস্তায় সংঘর্ষ চলায় তারা ঘটনাস্থলে যথা সময়ে যেতে পারে নাই।

আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি পুড়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আলমগীর চৌধুরী।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা শহরের টাউন হলে আওয়ামী লীগের কর্মসুচি পালন করছিলাম। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, শিবির অংশ নিয়ে অতর্কিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বাসভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে। এতে আমাদের কয়েকজন পুলিশ আহত হন। আমরা জনগণের জানমাল রক্ষার্থে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করি। শহরে এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

(ঢাকাটাইমস/০২আগস্ট/ইএস)