চলমান ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে আছি, ছিলাম ও থাকব: মোহাম্মদ আশরাফুল
প্রকাশ | ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১৭:৫৭
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে উত্তাল পুরো দেশ। ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন নানা শ্রেণির মানুষ। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে ৯ দফা দাবি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে শনিবার যুক্ত হয়েছেন ক্রীড়া সাংবাদিকরা। তবে এর আগেই ফেসবুকে নিজেদের প্রোফাইল থেকে সংহতি দেখিয়েছেন ক্রিকেটাররা। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকা মোহাম্মদ আশরাফুল এবার সরাসরিই পক্ষ নিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের।
নিজের ফেসবুক ওয়ালে সুবিশাল এক স্ট্যাটাসে ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন দেশের ক্রিকেটের সাবেক এই অধিনায়ক। লিখেছেন ‘আমি চাই, শুধু কোটার বৈষম্য নয় বরং দেশে বিরাজমান সকল সংকট ও বৈষম্যে মুক্তি পাক।’
সাবেক এই অধিনায়ক সাবেক এবং বর্তমান ক্রিকেটারদের যারা ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আজ আপনি যতবড় ক্রিকেটার বা স্টারই হোন না কেন, আপনার দেশ, আপনার দেশের শিক্ষার্থী তথা তরুন সমাজ সর্বোপরি দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আপনার অহংকার আর তাদের সাপোর্ট ও ভালোবাসাই আজ আপনি তারকা, মহাতারকা। অনেককেই দেখলাম শিক্ষার্থীদের হতাহতে, গ্রেপ্তারে ও মৃত্যুতে সহানুভূতি, সমবেদনা জানিয়ে পাশে থাকার ডিরেক্ট/ইনডিরেক্ট পোস্ট দিয়েছেন আমাদের ক্রিকেটাঙ্গন থেকে। তাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।’
তিনি আরও লিখেন, ‘তবে, শিক্ষার্থীদের আমাদের প্রতি আশাটা আরো বেশি; তাই, অনেকেই বলছেন, আমরা কেন ক্রিকেটাররা একটা সমবেদনা মূলক নিরপেক্ষ একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিতেও সংকোচবোধ করছি? সেই ক্ষোভ থেকেই নাকি বড়বড় তারকাদের নাকি মানহানি করা হচ্ছে!’
‘তাদের ভাষ্য-দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অর্থাৎ পৃথিবীর ইতিহাসে ২য় সর্বোচ্চ ছাত্র-হত্যাযজ্ঞ (চায়নার পরেই) নিউট্র্যাল একটি সত্য বিবৃতিও কি আমাদের কাছ থেকে এই ক্রিকেট পাগল জাতি আশা করতে পারেন না?
যারা কিনা দিনের পর দিন, রাতের পর রাত জেগে আমাদের খেলা দেখতেন, বিজয়ধ্বনিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসগুলো মাতিয়ে রাখতেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বড়বড় তারকারা যারা এখনো আপনাদের সাথে যুক্ত হননাই তারা হয়তো বিশেষ অসুবিধার মধ্যেই আছেন, হয়তোবা যোগদিবেন অতি দ্রুতই আপনাদের সাথে, আপনাদের নৈতিক আন্দোলনের সাথে।’
নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে সাবেক এই অধিনায়কের বক্তব্য, ‘আমার ব্যক্তিগত অবস্থান, বৈষম্যবিরোধী ন্যায়ভিত্তিক চলমান ছাত্র আন্দোলনের (পরিস্কারভাবেই) পক্ষে আছি, ছিলাম ও থাকব ইনশাআল্লাহ। আমি চাই,শুধু কোটার বৈষম্য নয় বরং দেশে বিরাজমান সকল সংকট ও বৈষম্যে মুক্তি পাক।’
আশরাফুলের ভাষ্য, ‘আমি কয়েকমাস ধরে মাইনর কাউন্টি খেলার জন্য ইংল্যান্ডে আছি, নেট-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো তাই আপনাদের মহতি এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলে সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত হতে দেরি হয়ে গেল। তারজন্য আন্তরিকভাবে দু:খ প্রকাশ করছি।’
তিনি আরও লিখেন, ‘(খাদ্যদ্রব্যের অস্বাভাবিক উর্ধগতি, ডলার সংকট, সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতনসহ সকল বে-আইনি জিনিস বন্ধ হোক সম্ভব হলে এখনই (এই আন্দোলনের মাধ্যমেই হোক)
২ শতাধিক মানুষের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ; বলার কোন ভাষা আমার নাই। বুকচেতিয়ে দেয়া দু:সাহসী সাইদ বা পানি লাগবে কারো পানি বলা টগবগে যুবক মুগ্ধ এদের মৃত্য সবসময়ই চোখের সামনে ভেষে উঠে...তবুও সমবেদনা জানাই আন্দোলনে নিহত শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি। চাইনা আর একটা মৃত্যুর ঘটনাও ঘটুক। চাই ছাত্রছাত্রীরা দ্রুত ক্লাসে ফিরে যাক। সবকিছু স্বাভাবিক হোক।’
প্রিয়ভক্তদের উদ্যেশ্যে তিনি লিখেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমাদের ক্রিকেটাররা সত্যের পক্ষে কেউ বেশি কিছু লিখুক বা নাই লিখুক, মনে মনে কিন্তু সত্যটা অস্বীকার করেনা, কেউ করবেও না। তারা পরিস্থিতির স্বীকার হয়তোবা!
তবে এটিও বলবো ;যা দেখি তা সবই সত্যি নয় আবার, যা দেখিনা তা সবই মিথাও নয়!(এই যে দেখুন, আন্দোলনের ৬ সমন্বয়কের ডিবি অফিসের বিবৃতি আর এখনকার বিবৃতি!)
এখান থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে...!’
নিজের সেই পোস্টে আশরাফুল আরও যোগ করেন, ‘আইনশৃংখলা রক্ষায় নিয়জিত ভাইদের প্রতি অনুরোধ নিরীহ কারো উপর অধিক বলপ্রয়োগ করবেন না: কারন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আপনারই ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, বা আপনার মতই অন্য কারো স্বজন। নিরপেক্ষ তদন্তের অধিনে - যে বা যারাই খুন, হত্যাযজ্ঞ ও স্থাপনা ধ্বংসে নিয়োজিত ছিল তাদের সঠিক ও দ্রুতসময়েই দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত হউক।’
(ঢাকাটাইমস/০৩ আগস্ট/এনবিডব্লিউ)