নোটিশের জবাবে যা বললেন জাবির সেই অধ্যাপক
প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২৪, ২২:০৬
গত বৃহস্পতিবার কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হত্যা, তাদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও আটকের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করে নিজ কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সরিয়ে ফেলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শামীমা সুলতানা। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার তাকে নোটিশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে তিনি কথা বলেন ঢাকা টাইমসের সঙ্গে। নিজের সর্বশেষ অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের নোটিশের বিষয়ে অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘চিঠিটা এখনো পাইনি। যদিও তারা সিন্ডিকেট বসিয়েছে। ছবি কেন নামিয়েছিলাম তার ব্যাখ্যা আমি বিভিন্ন জায়গায় দিয়েছি। শুক্রবারে সিন্ডিকেট বসেছিল। আমার কাছে যেহেতু চিঠিটা আসেনি, তাই আপাতত এর উত্তর দেওয়ার কোনো প্রয়োজন বোধ করছি না। সিন্ডিকেটে যারা আছেন সবাই আবার বৈধ সদস্য না। সেখানে অন্তত দুজন এমন আছেন যারা অবৈধ সদস্য।’
‘আবার দেখেন শিক্ষকদের নিয়ে সিন্ডিকেটে বসেছে কিন্তু সেখানে শিক্ষক প্রতিনিধি নেই। তার চেয়েও যেটা দুঃখজনক ওনারা যখন আমাকে নিয়ে সিন্ডিকেট সভা করছে তখন আমার ঢাকা শহর রক্তাক্ত। আমার বাংলাদেশ রক্তাক্ত। উত্তরায় সেসময় মারছে, রক্তাক্ত করছে, সেসময় তারা সিন্ডিকেট করছে। আমি এটার তীব্র প্রতিবাদ করি। আমি মনে করি তাদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই, আমাকে নিয়ে বিচার করার।’
ড. সুলতানা আরও বলেন, ‘আমার বক্তব্য স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি— যার হাতে এত মেধাবীদের রক্তের দাগ, শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত। যেভাবে মেধাশূন্য করে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশকে; এসব কিছুর প্রতিবাদ স্বরূপ আমি কাজটি করেছি। যদিও চিঠিটা আমি দেখিনি। আমি চিঠিটা দেখতে চাই। (একজন সাংবাদিক নাকি প্রশাসনকে জিজ্ঞেসা করেছিলেন— আপনারা ম্যামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন? তখন তারা বলেছে, না না আমরা তো লিখিত চিঠি দিয়েছি। যদিও আমি চিঠিটা এখনো পাইনি।’
উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে জাবির এই অধ্যাপক বলেন, ‘যে ভিসি নিজের বাসায় উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে তার ছাত্রলীগ বাহিনী দিয়ে এবং পুলিশি বাহিনী দিয়ে। যে ম্যাসাকার করেছে ১৫ তারিখে। আবার ১৮ তারিখে পুলিশ যেভাবে শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা চালিয়েছে। যেভাবে নির্যাতন করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে আমরা তাকেসহ জাবি প্রশাসনের অন্যান্যদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছি। আমরা এই প্রশাসন কাঠামোটাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছি।’
ব্যক্তিগতভাবে কোনো আক্রোশের শিকার হচ্ছেন কি না এমন প্রশ্নে অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, সামগ্রিকভাবে ব্যক্তিগত নেওয়াটা ভুল হবে। আমি যেহেতু একটা দল করি এটা নিয়ে বিভিন্ন মহলে তারা হাইলাইট করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই আন্দোলনটা কোনো দলের আন্দোলন না। দলমত নির্বিশেষে সবাই এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। আমি যখন (২০০৫) থেকে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছি তখন থেকেই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আন্দোলনে তাদের পাশে থেকেছি। তখন দল চিন্তা করিনি। কোনো দিন দল চিন্তা করবো না। আমার কাছে সবচেয়ে বড় হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাদের আক্রোশ আমাকে দমন করতে পারলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কিছুটা দমন হয়ে যাবে। জনগণ যেভাবে জেগে উঠেছে, সারা বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে, সে তুলনায় আমার প্রত্যাখ্যান মনে হয়েছে খুবই ক্ষুদ্র।’
(ঢাকাটাইমস/০৪আগস্ট/এসআইএস)