রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চান চবির শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১১:২৭ | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪৬
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি করেছেন তারা।
সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও হলগুলোকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত হলগুলো ছাত্রলীগের দখলে ছিল। হলে থেকে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আধিপত্য বিস্তার করেছে। বিভিন্ন সময় চাপ প্রয়োগ করেছেন শিক্ষার্থীদের ওপর। করেছে নির্যাতন, শোষণ উৎপীড়ন।
স্বৈরাচার সরকার পতন হওয়ার সাথে সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর কাউকে পাওয়া যায়নি ক্যাম্পাসের আশপাশে। ছাত্রলীগমুক্ত হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হলগুলো।
সোমবার চবির আবাসিক হলগুলোতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে এর বাইরে কোনো রুম থেকে একটি কাগজও নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সমন্বয়করা। পাশাপাশি হলগুলোতে কোনো রাজনৈতিক নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখন থেকে থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।
চবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রাথমিক সফলতার বিজয় সমাবেশ ও র্যালি করেছে। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা- কর্মচারীসহ ক্যাম্পাসের আপামর জনসাধারণ এতে অংশ নিয়েছেন। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিজয় মিছিল শুরু করেন। মিছিল শেষে শহীদ মিনারে সমাবেশ করেন।
বিজয় র্যালি শেষ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, আজকে আমরা যে বিজয় নিয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি সে বিজয় আমাদের ধরে রাখতে হবে। এই স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে। ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে সেটা যেন জনগণের সরকার হয় সে সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। আমাদের সব সময় সচেতন থাকতে হবে ক্যাম্পাসের হলগুলো যেন ছাত্রদের অধিকারে থাকে। ক্যাম্পাসে অতি শিগগিরই যেন চাকসু চালু করা হয়। ক্যাম্পাসে যেন কোনো দলীয় রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে। অতি শিগগিরই যেন চবি প্রশাসন হলগুলোতে এলোটমেন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কোনো ধরনের রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইলে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
চবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের শিক্ষার্থী আনিকা তাবাসসুম বলেন, যে রাজনীতির কারণে আমাদের ভাইদের জীবন চলে যায়, সেই রাজনীতি আমরা চাই না। আমরা সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিভাগ ও ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম। আমরা কোনো ছাত্র ভাইবোন কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হবো না।
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেমন ক্যাম্পাস প্রত্যাশা করেছেন তা নিয়ে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেন। তাদের সেই দাবিগুলো হলো—
১) কোনো বিভাগে সেশনজট থাকবে না। প্রতি বছর নভেম্বর মাসের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে। চূড়ান্ত পরীক্ষার ৩ সপ্তাহ পূর্বে টিউটোরিয়াল, প্রেজেন্টেশন শেষ করতে হবে এবং ৪ সপ্তাহ পূর্বে PL দিতে হবে।
মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৭৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।
২) বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ভর্তি ফি, পরীক্ষা ফিসহ যাবতীয় আর্থিক লেনদেন সেইসাথে পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩) আবাসিক হলগুলোতে Faculty Based Allotment দিতে হবে। কোনো প্রকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলবে না।
৪) বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি এবং শিক্ষকদের রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
৫) শাটলে পাওয়ার কার যুক্ত করতে হবে। আমাদের ডেম্যু ট্রেন ফিরিয়ে দিতে হবে। ট্রেনের সিডিউল বৃদ্ধি করতে হবে।
৬) বিশ্ববিদ্যালয়কে "International Ranking" এ স্থান দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় Research, Publications করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
৭) ‘চাকসু’ চালু করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমন্বয় ও মেলবন্ধনের সেতু হিসেবে শহরে ‘TSC’ চালু করতে হবে।
৮) ক্লাসে শিক্ষক যথাসময়ে ঢুকবেন, নির্ধারিত সময়ে ক্লাস শেষ করে চলে যাবেন। কারণবশত ক্লাস নিতে না পারলে রাতের মধ্যে CR দেরকে জানিয়ে দিবেন।
৯) ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। জিরো পয়েন্ট ও ২ নম্বর গেটে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
১০) রক্তে অর্জিত স্বাধীনতায় কারও স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নেওয়া হবে না। প্রতিটি বিভাগে একটি করে অভিযোগ বক্স থাকবে।
উপরোক্ত ১০ দফা অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।
(ঢাকা টাইমস/০৭আগস্ট/এসএ)