পুলিশের সব সদস্যকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে কর্মস্থলে হাজিরের নির্দেশ আইজিপির

প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১৬:৫৩ | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১৮:১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

সারাদেশের পুলিশ সদস্যকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যার মধ্যে  স্ব স্ব পুলিশ লাইন্স, দপ্তরে, পিওএম, ব্যারাকে ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম।

বুধবার বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ নির্দেশ দিয়েছেন নতুন আইজিপি। 

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। এর কারণে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অনেকেই স্ব স্ব ইউনিটে নেই। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা নতুন করে শুরু করতে চাই। তাই আগামী ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার সকল মেট্রোপলিটন, জেলা, নৌ, রেলওয়ে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের সকল থানা, এদের অফিসার এবং ফোর্সদের স্ব স্ব ইউনিউ এবং রেঞ্জে উপস্তিতি থাকার নির্দেশনা ফেরার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

ছাত্র আন্দোলন দমনে অপারেশনাল ভুলত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করে আইজিপি বলেন, ‘ছাত্র, সাধারণ মানুষ, পুলিশসহ অনেকেই নিহত হয়েছেন। সবকিছুর জন্য আইজিপি হিসেবে আমি দু:খ প্রকাশ করছি।’

আইজিপি বলেন, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপাররা স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রের থানা এলাকায় জ্যেষ্ঠ নাগরিক, পেশাজীবী, ছাত্র প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করবেন। আমরা জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, বর্ণিত কমিটি থানা ও থানা এলাকার নিরাপত্তা বিধানে আপদকালীন সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং পরবর্তীতে এর চূড়ান্ত রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে।  

কোনো ধরনের দাবি, মন্তব্য ও প্রতিউত্তর না দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আমি পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে সব স্তরের সহকর্মীকে সামাজিক মাধ্যমে কোনও প্রকার ব্যক্তিগত, সমিতি, ব্যাচ, অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে কোনও দাবি, মন্তব্য, প্রতিউত্তর প্রদানে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করছি। 

তিনি বলেন,‘ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র, সাধারণ মানুষ, পুলিশসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতি ফিরিয়ে আনতে আমরা সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট রয়েছি। বাংলাদেশ পুলিশ সর্বদা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণই রাষ্ট্রের মূল শক্তি। তাই, আমরা সবসময় জনগণের পাশে থেকে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে বদ্ধ পরিকর। আপনাদের সুচিন্তিত মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি দক্ষ, জনবান্ধব, প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক পেশাদার পুলিশ সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা সবাই একযোগে কাজ করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।’ 

নতুন আইজিপি বলেন, আমাদের কতিপয় উচ্চাভিলাষী, অপেশাদার কর্মকর্তার কারণে এবং কর্মকৌশল প্রণয়নে বলপ্রয়োগের স্বীকৃত নীতিমালা অনুসরণ না করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করা ও নেতৃত্বের ব্যর্থতায় আমাদের অনেক সহকর্মী আহত, নিহত এবং নিগৃহীত হয়েছেন। এই সন্ধিক্ষণে আমি সব পুলিশ সদস্যকে আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাই, আপনারা দেশ ও জাতির প্রয়োজনে শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে আত্মনিয়োগ করুন। আপনাদের জীবনমানের উন্নয়ন এবং সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত একটি ঐতিহ্যবাহী পেশাদার ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। দেশের প্রয়োজনে যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে এই বাহিনী সবসময় সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেছে। বর্তমান বৈষম্যবিরোধী যৌক্তিক আন্দোলনে আমাদের পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এজন্য বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ হতে আমি পুলিশ প্রধান হিসেবে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমরা এখন হতে আমাদের উপর অর্পিত আইনি সব দায়িত্ব পালনে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ।
 


(ঢাকাটাইমস/০৭আগস্ট/এলএম/এমআর)