চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিল হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১৭:৫০
অ- অ+

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ধাক্কা লাগছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ওপর। প্রশাসনের সব স্তরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হচ্ছে। ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে সেই প্রক্রিয়া। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম বাতিল হলো পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ মামুনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ।

চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাদের তালিকা ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে জানা গেছে।

শাসনক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন দপ্তরে চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিলের জন্য দাবি উঠছে জোরেশোরে। বাংলাদেশ ব্যাংকে তো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত চার ডেপুটি গভর্নরসহ ছয় শীর্ষ কর্মকর্তার জোর করে পদত্যাগের ঘটনাও ঘটেছে। তাই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগসহ সরকারপন্থী হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারা এখন আতঙ্কে আছেন।

সাম্প্রতিককালে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে একের পর এক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হতে দেখা যায়। প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিবও চুক্তিভিত্তিক। গত চার মাসে সাত সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চুক্তিভিত্তিক। শুধু গত জুনেই মুখ্য সচিবসহ অন্তত চারটি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ ২৮ জুলাই তিন বছরের জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের এক সদস্যকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। এর আগে গত জুলাই চুক্তিতে চাকরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয় পুলিশের (সদ্য বাতিল) মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের। গত জুলাই সিনিয়র সচিব মর্যাদায় সাবেক জননিরাপত্তা সচিব মোস্তাফিজুর রহমানকে দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটিরপ্রধান পরামর্শক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসএমএমইউসহ বিভিন্ন দপ্তর প্রশাসনে বহু শীর্ষ কর্মকর্তা কমিশন সদস্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া। আবার ওয়াসার মতো অনেক দপ্তরের শীর্ষ পদে দীর্ঘদিন ধরে একাধিকবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে বহাল আছেন অনেক কর্মকর্তা।

বর্তমানে প্রশাসনে ৮৫ জন সচিব রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৯ জনের নিয়োগ চুক্তিভিত্তিক। তারা শেখ হাসিনা সরকারের আমলে একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে সচিব-সিনিয় সচিব হয়েছেন, অবসরের পর আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও বাগিয়ে নিয়েছেন।

বিভিন্ন দপ্তরে সিনিয়র সচিব পদমর্যাবদার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আখতার হোসেন, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া।

সচিব পদমর্যা দার কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিব মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (লিয়েনে কর্মরত) বেগম শরিফা খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ, সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগের সচিব বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. ফজলুল বারী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব . মো. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী সদস্য মো. খাইরুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম ওয়াহিদা আক্তার এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রশাসনে হতাশা তৈরি করে পদোন্নতিপ্রত্যাশী কর্মকর্তাদের মধ্যে। যোগ্য কর্মকর্তাদের বিবেচনায় না নিয়ে ব্যক্তিগত সখ্য ক্ষমতাসীন দলের আনুগত্যকে প্রাধান্য দিয়ে এসব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

এর ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এতে ব্যাহত হয় পদোন্নতির স্বাভাবিক ধারা। কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা অসন্তোষ বাড়ে। অনেক দক্ষ যোগ্য কর্মকর্তাও যথাযথ মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হন। আবার অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এমনকি যেসব কর্মকর্তার যোগ্যতা, সততা এমনকি আদর্শিক ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তারাও নানাভাবে চুক্তিতে পুনর্নিয়োগ নিয়ে নিচ্ছেন।

কারিগরি কিংবা অন্যান্য বিশেষজ্ঞ দক্ষতা রয়েছে এমন কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রের স্বার্থে জনগণের প্রয়োজনে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার রীতি সব সময় পালন করা হয় না।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ধারা যেভাবে

প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ধারা সম্পর্কে খোঁ নিতে গিয়ে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবের শাসনামলে কর্মকর্তার অভাবে দক্ষদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতো। ১৯৭৫ সালের মে মাসে তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, ‘যেসব ক্ষেত্রে তুলনীয় যোগ্যতম দক্ষতাসম্পন্ন টেকনিক্যাল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পাওয়া দুষ্কর, শুধু সেসব ক্ষেত্রেই চুক্তির ভিত্তিতে অবসর নেওয়ার পরও তাদের নিয়োগ করা যেতে পারে। অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থাৎ যেখানে তুলনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন লোক পাওয়া সম্ভব, সেখানে নীতির উদার প্রয়োগ বাঞ্ছনীয় নয়।

১৯৮২ সালের মার্চ মাসের এক আদেশে তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুনর্নিয়োগ বিবেচনার জন্য বলা হয়- অবসর নেওয়ার পর সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে।

বিশেষায়িত কর্মসম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষ বিবেচনায় রাষ্ট্রপতির কোটায় আগে মোট পদের ১০ শতাংশ চুক্তিতে পুনর্নিয়োগের বিধান ছিল। ২০০১-০৬ মেয়াদের জোট সরকারের সময় বিধান বাতিল করা হয়। ফলে যত খুশি তত নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ করা হয়। এরপরও প্রশাসনে বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চলছেই।

(ঢাকাটাইমস/০৭আগস্ট/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
তারেক রহমান জিতলে বাংলাদেশ জিতবে: প্রস্তুতি সভায় এস এ সিদ্দিক সাজু
কুমিল্লায় যুবলীগ সভাপতি ওমানী কাশেম গ্রেপ্তার
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে পঞ্চম আন্তর্জাতিক রোবো টেক অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত
বেনাপোলে ১৮ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা