জাহিদ মালেকপুত্র রাহাতের রাহুমুক্ত প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট, খুলে দিলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার পুনরায় পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ছেলে রাহাত মালেক-চক্র দখলের অপচেষ্টা থেকে প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে বলে অভিযোগ ছিল। পুনরায় খোলার অনুমতির মাধ্যমে এই চক্রটির রাহুমুক্ত হলো প্রায় দেড় যুগ স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসা বনানীর এই প্রতিষ্ঠান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের পরিচালক আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটিকে আগের মতো নিয়মিত কার্যক্রমে ফিরতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রেসক্রিপশন পয়েন্টের মূল্যবান যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ও জনবলের জীবন রক্ষার্থে এবং অভিযোগ সংশোধন সাপেক্ষে বিধিবিধান মেনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদনে প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় পরিচালনার অনুমতি প্রদান করা হলো।
এর আগে ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আকস্মিকভাবে চালানো অভিযানের নামে তড়িঘড়ি করেই রাজধানীর স্বনামধন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে সিলগালা করে দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সেসময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লোকজন প্রেসক্রিপশন পয়েন্টের গেটে একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছিল। সেখানে লেখা ছিল— ‘অনিবার্য কারণবশত প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লি. সাময়িক বন্ধ থাকবে।’
মালিকপক্ষের অভিযোগ ছিল, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসা প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার দখলে নিতে জাহিদ মালেকের ছেলে রাহাতের চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। তারাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগসাজশ করে অভিযানের নামে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে।
সেসময় ঢাকা টাইমসের অনুসন্ধানে জানা যায়, বনানীর ১২ নম্বর রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি ৬ কোটি টাকা দলিলমূল্যে কিনে নেন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ইমরান মুস্তাফিজ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে রাহাত মালেকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ইমরান মুস্তাফিজ। রেন্টাল কোর্টের মাধ্যমে ১৭ হাজার ৪৫৯ বর্গফুট বাড়ির ভাড়াও তুলে নিচ্ছিলেন ইমরান মুস্তাফিজ। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি দখলে নিতে চক্রান্ত শুরু হয়।
তৎকালীণ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ছেলে রাহাত মালেক প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে যে স্থানে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি ভাড়ায় স্থাপিত সেটি তিনি কিনে নিতে বায়না করেছেন বলে জানান।
প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষকে রাহাত মালেক জায়গাটি ছাড়ার হুমকি দেন। আর সেটি না হলে তাকে (রাহাত মালেক) যেন উপর্যুক্ত শেয়ার দিয়ে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেডের মালিকানায় যুক্ত করা হয় সেই শর্ত জুড়ে দেন।
তবে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকপক্ষ অপারগতা প্রকাশ করে। ভাড়াসহ কয়েকটি বিষয়ে আদালতে মোকদ্দমা চলছে জানিয়ে রাহাত মালেককে ত্রুটিযুক্ত জমি কেনার সঙ্গে জড়িত না হওয়াই শ্রেয় বলে পরামর্শ দেন। কিন্তু এই পরামর্শই সম্ভবত কাল হয় প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট মালিক কর্তৃপক্ষের জন্য।
তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ছেলে রাহাত মালেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখানোর পরই শুরু হয় একের পর এক সরকারি দপ্তরের অতি-তৎপরতা। একপর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বেআইনিভাবে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়।
প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার আবু আশফাক ঢাকা টাইমসকে বলেন, পরিদর্শন করে কোনো কারণ না দর্শিয়ে রাতারাতি আমাদের প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের ওপর সম্পূর্ণ অন্যায় করা হয়েছিল। এখন আবার আমাদের খুলতে খুলতে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
(ঢাকাটাইমস/০৮আগস্ট/ডিএম)