আন্দোলন ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা রাবির চার শিক্ষার্থীর: সমন্বয়ক পরিষদ
প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৩ | আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১৬:২৫
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিষদ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের গোপনীয় তথ্য প্রকাশসহ সরকারের হয়ে ভূমিকা পালন করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চার শিক্ষার্থীর নামে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান তারা।
বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৭ সদস্য বিশিষ্ট সমন্বয়ক পরিষদ।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন— আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা রেজওয়ান গাজী মহারাজ, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী আশিকুল্লাহ মুহিব, রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর এবং পপুলেশন সায়েন্সের শিক্ষার্থী এবং রাকসু আন্দোলনের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ খান। এদের মধ্যে মহারাজ, মুহিব এবং আমানুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন এবং আর তাদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন আব্দুল মজিদ অন্তর।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এফআরএম ফাহিম রেজা বলেন, দীর্ঘ পরিশ্রম ও আন্দোলন-সংগ্রামের পর ছাত্র-নাগরিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে আমরা অবশেষে স্বাধীনতার দেখা পেয়েছি। সংগ্রামের এই পথ মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। এর প্রতিটি পদে পদে ছিল ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতা। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হয়ে বিভিন্ন সময় আমাদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছেন এ চারজন। সাধারণ ছাত্রদের আবেগকে পুঁজি করে প্রশাসন ও ছাত্রলীগের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় না করে নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে কথিত আন্দোলন পরিচালনা করার কারণে শিক্ষার্থীরা এক পর্যায়ে তাদেরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
তারা আরও বলেন, শুরু থেকেই এই গোষ্ঠী ছাত্রলীগ, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী আলাদা ব্যানারে, ভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আসছিল। তারা পুলিশ ও পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষের সাথে লিয়াজোঁ করে রেল চলাচলের সিডিউল মোতাবেক অর্থাৎ যে সময় রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে সেসময় কর্মসূচি পালন করে। সারা দেশ যখন ব্লকরেইড কর্মসূচি পালন করে তখন তারা শুধু সংবাদ সম্মেলনের মতো হাস্যকর কর্মসূচি দেয়। এর প্রেক্ষিতে একজন সমন্বয়ক পদত্যাগ করেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি থেকে অন্য তিন সমন্বয়ককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
আপনাদের মনে আছে, হেলিকপ্টার থেকে ব্রাশফায়ার করে গণহত্যার পরপরই শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এক মাসের জন্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে একটা সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিল। সেখানে ছাত্রলীগের রেজয়ানুল গাজী মহারাজ শিক্ষার্থীদের মামলা প্রত্যাহারের লোভ দেখিয়ে ডিজিএফআই কার্যালয়ে নিয়ে যান। এরপরই ডিজিএফআই এর গাড়িতে করে তাদের নিয়ে এসে সংবাদ সম্মেলন করানো হয়। আগে থেকে আন্দোলনের অন্যান্য সমন্বয়ক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রশাসনের কাছে ফাঁস করতে থাকেন তারা। যার কারণে ১৫ জন শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামা অনেকের নামে প্রায় ৭০ লাখ টাকার মামলা করেন ছাত্রলীগের এক নেতা।
এছাড়াও তিনি আরও বলেন, এই সংবাদ সম্মেলনের পর রাজশাহীতে আন্দোলন স্থিমিত হয়ে পড়লে সাবেক সাংবাদিক রাশেদ রাজন শিক্ষার্থী এবং সক্রিয় সমন্বয়কদের সাথে যোগাযোগ করে একটি কমিটি দেন। এই কমিটির কার্যক্রম মেনে নিতে না পেরে আব্দুল মজিদ অন্তর, আমানুল্লাহ, আশিকুল্লাহ মুহিব এবং রেজওয়ানুল গাজী মহারাজ ডিবির কাছে আন্দোলনকারীদের তথ্য ফাঁস করতে থাকে। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজিব, ফাহিম রেজা এবং রাশেদ রাজনকে গ্রেপ্তার করানোর জন্য মাঠে নামেন। পরে ডিবি পুলিশ রাশেদ রাজনকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারলেও পালিয়ে সরে আসেন ফাহিম এবং সজিব। ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে ২৪ ঘণ্টা ধরে রাশেদ রাজনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে।
শুধু তাই নয়, বিজয়ের পরও তারা নানান কুচক্রী মহলের সাথে যোগাযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। আজ জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করার মাধ্যমে আমরা জাতিকে তাদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক ও সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। সকল অসাধু মহলকে সম্মিলিত উপায়ে প্রতিহত করে দিয়ে একটি সুন্দর, নিরাপদ ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার জন্য সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি। শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সর্বমহলের কাছে আমদের অনুরোধ রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগীতা কামনা করছি।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৭ সদস্য বিশিষ্ট সমন্বয়ক পরিষদের ১৪ জন উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মো. আমান উল্লাহ খান বলেন, যারা আমার সাথেই আন্দোলন শুরু করেছিল, তারাই আজ আমার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুলেছে। ছোট ভাইদের নিয়ে আমার ক্ষোভ বা অভিযোগ নাই। শুধু এটুকুই বলবো তাদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছায়নি। আর যদি তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকে তবে, তা জাতির কাছে প্রকাশ করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে, আমি তাদের সহযোগিতা করবো।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না এবং আমার কোন ধারণা নেই। এ বিষয়ে আমার কারো সাথে যোগাযোগও হয়নি।
(ঢাকা টাইমস/০৯আগস্ট/এসএ)