নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও র্যাব বিলুপ্তির দাবি বিশিষ্টজনদের
প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২৪, ১৮:৩১
নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান অনেকাংশে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই সংবিধান অপ্রতুল। তাই বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। এছাড়া পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তির দাবিও উঠেছে। বক্তারা বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত হয়েছে র্যাব।
রবিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব দাবি তোলেন বক্তারা। ‘নতুন বাংলাদেশে জনপ্রত্যাশা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সামাজিক সংগঠন নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণ (নাবিক)। এতে সভাপতিত্ব করেন নাবিক সভাপতি শিহাব উদ্দিন খান। আলোচ্য বিষয়ে ধারণাপত্র পাঠ করেন নাবিকের সহসভাপতি বুরহান উদ্দিন ফয়সল।
আলোচনায় অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তাহমিদ মুদ্দাসসির চৌধুরী, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. মাসদার হোসেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ইকতেদার আহমেদ, জেলা জজ (অব.) বীর মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ আলম, মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক ড. গোলাম রাব্বানী, নিরাপত্তা বিশ্লেষক কর্নেল (অব.) আব্দুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, চট্টগ্রামের সাবেক অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আব্দুর রহমান, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী সৈয়দ জাহিদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুসতাসীম তানজীর ও স্থপতি মারুফ হোসাইন। আরও ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইমুম রেজা পিয়াস।
ধারণাপত্রে নাবিকের সহসভাপতি বুরহান উদ্দিন ফয়সল সরকারের প্রতি পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- ‘১. মানবাধিকার লংঘনের দায়ে র্যাবের বিলুপ্তি, ডিজিএফআইর আমূল সংস্কার এবং পুলিশের সংস্কার ও লোগো পরিবর্তন; আওয়ামী ফ্যাসিজমের সঙ্গে জড়িত এবং সহযোগীদের কঠোর বিচার এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা; ৩. অকার্যকর ও আওয়ামী রেজিম টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন জনবান্ধব সংবিধান প্রণয়ন; ৪. ন্যয়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নতুন বিচারক নিয়োগ এবং সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ সকল কালো আইন বাতিল করতে হবে; ৫. ন্যয়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তাহমিদ মুদ্দাসসির চৌধুরী বলেন, চার দিকে শুধু ষড়যন্ত্রের গন্ধ। বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার প্রত্যেকটা স্তরে স্তরে নিজের লোক বসিয়ে রেখেছে।
গণমাধ্যমের সমালোচনা করে তাহমিদ বলেন, গতকাল শনিবার যখন‘জুড়িশিয়াল ক্যু’ হলো সেটি একটা টিভি মিডিয়াতেও দেখানো হলো না। একটা অদৃশ্য শক্তি মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কী হচ্ছে সেটি মিডিয়া প্রচার করছে না। খবরগুলো ফিল্টারিং করা হচ্ছে।
আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট রেজিমের দালালদের খুঁজে বের করা দরকার। অনেক রক্তের বিনিময়ে এই নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। সবার প্রতি আহ্বান জানাই, শহীদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি করবেন না।’
তাহমিদ বলেন, এখনও পুলিশ প্রশাসন থেকে অসহযোগিতা করা হচ্ছে। সবাই কাজে আসছেন না। তারা এখনও থানাগুলোতে যোগ দিচ্ছে না। আমাদের কাজকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করে কথা বলতে হবে। বিগত স্বৈরাচারের পরীক্ষিত দালালরা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে এখনও বহাল তবিয়তে আছে। তারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো যে দেশবিরোধী শক্তিগুলোর কাছে পাচার করছে না তার নিশ্চয়তা নাই। দেশবিরোধী শক্তিগুলো এখনও কাজ করছে।