গোপালগঞ্জে নিরাপত্তাহীনতায় বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২৪, ১৯:০০

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর গোপালগঞ্জের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। 

জানা যায়, কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলন করে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষিপ্ত হন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 

আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে গত ৯ আগস্ট গোবরা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু মানুষ ঝামেলা করেন। এ সময় তারা মেসের গেট বন্ধ করে দিলে গেটে হামলা করা হয়। অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদে ও তাকে পুনরায় দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে গত শনিবার ( ১০) আগস্ট ) দুপুর থেকে গোপালগঞ্জের গোপীনাথপুরে  ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করলে তাদের ওপর হামলা করা হয়। এতে ২ জন গুলিবিদ্ধ সহ সেনাবাহিনীর পাঁচ সদস্য গুরুতর আহত হন।

এদিকে সেনাবাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় গোপালগঞ্জে সব ধরনের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য যশোর থেকে সাঁজোয়া যান সহ অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। 

এমন পরিস্থিতিতে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চরম নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করছেন। নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন," যেখানে সম্পূর্ণ বাংলাদেশে একটি পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে, সেখানে গোপালগঞ্জের পরিবেশ তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে আমি স্বাধীনভাবে কিছু করতে পারবো না, কিছু বলতে পারবো না। আমরা শান্তশিষ্টভাবে কোনো আন্দোলন করলে স্থানীয়রা আমাদের ওপর হামলা করে।  তারা সব সময় আমাদেরকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখে। এমন ভয়ভীতি নিয়ে  পড়াশোনা করা যায় না। অন্য এলাকা থেকে এসে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা কোনো পরিবেশ নেই বলে জানান এ শিক্ষার্থী। 

তিনি আরও বলেন, "আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাই, আমাদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক। অন্যথায় আমাদেরকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে দেওয়া হোক।"

সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে বিজ্ঞান অনুষদের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ছাত্রদের নিরাপত্তার বিষয়ে কি বলবো, আমরা শিক্ষকরাই এখানে নিরাপদ নই। আমরা সব সময় ভয়ে থাকি এই বুঝি আমাদের উপর হামলা হলো। এখানে নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই ম্যানেজ করতে হবে। কিছু করার নেই।’

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবি প্রক্টর ড.কামরুজ্জামানের সঙ্গে সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে গোপালগঞ্জ প্রশাসনের কোনো কিছু ঠিকঠাকভাবে কাজ করছে না। আমি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিব কিন্তু তার জন্য কারো সাহায্য পাচ্ছি না।’ 

স্থানীয়দের হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গতদিন আমরা গোপালগঞ্জ ডিসি অফিসে জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসেছিলাম। তারা আমাকে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সন্তানের মতো। তাদের কেউ ক্ষতি করবে না। প্রশাসনও এই বিষয়ে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে। সার্বিক বিষয়ে আমি ভিসি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’

(ঢাকাটাইমস/১১আগস্ট/পিএস)