গাজায় যুদ্ধবিরতি

নতুন আলোচনার পরিবর্তে বাইডেনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন চায় হামাস 

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২৪, ১৬:৩০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

গাজায় যুদ্ধবিরতিতে নতুন আলোচনার পরিবর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধ জানিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস। 

রবিবার মধ্যস্থতাকারীদের উদ্দেশ্যে এক বিবৃতিতে হামাস বলছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থিত বাইডেনের প্রস্তাব, যা গত ২ জুলাই গ্রহণ করা হয়েছিল- দ্রুত তা বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ নতুন আলোচনার জন্য সময় দেওয়া মানে ইসরায়েলকে আগ্রাসন চালানোর জন্য আরও সময় দেওয়া। তাই নতুন প্রস্তাবের যাওয়ার পরিবর্তে এটি মেনে চলা উত্তম।’

বিবৃতি আরও বলা হয়, ‘ইসরায়েল আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে তার আগ্রাসন বাড়িয়েছে এবং আমাদের নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যাসহ আরও গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে একটি বিষয় পরিস্কার হয়েছে- তারা আগ্রাসন চালিয়ে যেতে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে না পৌঁছাতে চায় না।’

তিন মধ্যস্থতাকারী দেশ মিশর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র বৃহস্পতিবার ইসরায়েল এবং হামাসকে আর কোন বিলম্ব বা অজুহাত ছাড়াই একটি যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তি শেষ করার আহ্বানের পরেই এই দাবি জানিয়েছে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি। 

কাতারের আমীরের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত কাতারি আমির, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষরিত একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আরও বিলম্বের জন্য কোনো পক্ষের কাছ থেকে আর কোনো সময় নষ্ট বা অজুহাত দেখানোর সুযোগ নেই।’

এরআগে গত জুন মাসের শুরুতে গাজায় একটি যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজে এই প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই প্রস্তাব নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের সঙ্গে আলোচনা করেছে মধ্যস্থতাকারী মিশর, কাতার ও মার্কিন প্রতিনিধিরা।

বাইডেনের নতুন এই প্রস্তাবে তিনটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। প্রথম ধাপে বলা হয়েছে, ছয় সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলের সেনারা গাজার সমস্ত জনবহুল অঞ্চল থেকে সরে যাবে। ওই সময়ের মধ্যেই হামাস ৭ অক্টোবরের হামলায় আটক করা আরো কিছু ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। পাশাপাশি ইসরায়েলকেও কিছু ফিলিস্তিনি জেলবন্দিকে মুক্ত করতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপে সমস্ত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। অন্যদিকে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নেবে।

তৃতীয় ধাপে গাজায় নতুন করে ভেঙে পরা ঘর-বাড়ির পুনর্গঠন শুরু হবে। মানুষের কাছে আরো বেশি করে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। দশ মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রায় ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৯৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

গত বছরের নভেম্বরে কাতারের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন নারী এবং ১৬৯টি শিশু রয়েছে। বিনিময়ে ২৪ বিদেশিসহ মোট ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। হামাসের কাছে এখনো প্রায় ১২০ জন জিম্মি রয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের।

সূত্র: আনাদোলু

(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/এমআর)