দেড় দশকে যত জুলুম অত্যাচার হয়েছে তার বিচার হবে: এবি পার্টি
প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০২৪, ২২:০৯
বিগত দেড় দশকে হাজার হাজার গুম, খুন, মিথ্যা মামলা, নির্বিচার জুলুম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করা হয়েছে। নির্লজ্জ দলীয়করণ করে প্রশাসনকে শোষণ ও দুর্নীতির আঁখড়া বানানো হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে তাদের পেশা ও ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এসব ঘটনার বিচার করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিকালে এবি আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) আয়োজিত ছাত্রগণজমায়েতে এসব কথা বলেন দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।
জনগণ বছরের পর বছর ভোট দিতে পারেনি উল্লেখ করে এবি পার্টির সদস্য সচিব বলেন, ‘নিজ গৃহ হতে উচ্ছেদ হয়ে দেশান্তরী হতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষকে। অন্যায়ভাবে নিজের ভিটা, বাড়ি হারিয়েছেন অগণিত মানুষ। এর প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হতে হবে। জনগণ যেন বুঝতে পারে অন্যায় অত্যাচার করে কেউ শেষ পর্যন্ত পার পায় না, একদিন জনতার হাতে পাকড়াও হতে হয়।’
মজিবুর রহমান মঞ্জু আরও বলেন, ‘ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান ও ১৫ বছরের জুলুম-শোষনের প্রতিদিনের স্মৃতি আমরা লিখে রেখেছি। কারা কীভাবে এই জুলুমের নেতৃত্ব দিয়েছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে রক্তের হোলি খেলায় মেতেছেন কারো নাম ও অপকর্মের কথা বাদ যাবে না। জনতার আদালতে প্রত্যেকের চেহারা ও আমলের খতিয়ান প্রকাশ করা হবে। যারা জীবন দিয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন সবাইকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানো হবে। এই বিপ্লব বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে নতুন করে চেনাবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার ও মেরামতের পাশাপাশি গত ১৬ বছরের সকল গুম, খুন, মিথ্যা মামলা, নির্বিচার জুলুম নির্যাতনের যেন বিচার হয় এবি পার্টি সেজন্য তৎপরতা ও সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।’
বিকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন বিজয়-৭১ চত্বরে গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও নির্যাতিত ছাত্র-জনতার স্মরণে এই গণজমায়েতের আয়োজন করা হয়।
এবি পার্টির প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুলের সঞ্চালনায় ও যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণজমায়েতে আরও বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, বিএম নাজমুল হক, যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা প্রমুখ।
এসময় সভাপতির বক্তব্যে মেজর মিনার বলেন, ‘আমরা বছরের পর পর আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়েছি, দেশের ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। বিজয়ের আনন্দে শহীদ ও আহতদের ভুলে গেলে চলবে না। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে যারা জীবন দিয়েছে তাদের স্বপ্ন বাস্তবে রুপ না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চালাতে হবে।’
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ‘খুনী হাসিনা শুধু মানুষই হত্যা করেনি, সে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসনসহ দেশের সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গুলোকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, আইন উপদেষ্টা মানবতাবিরোধী ট্রাইবুনালে হাসিনার বিচারের কথা বলেছেন। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলতে চাই, এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে, আগে সেই বিতর্কের অবসান করুন, আইন সংশোধন করুন, অভিজ্ঞ প্রসিকিউশন টিম নিয়োগ দিন, মান সম্পন্ন বিচারক ও তদন্তকারী সংস্থা নিয়োগ দিয়ে বিচারের কার্যক্রম শুরু করুন। হাসিনার নিয়োগকৃত টিমের মাধ্যমে তার কোনো বিচার হতে পারে না।’
ব্যারিষ্টার ফুয়াদ বলেন, ‘বাংলার ইতিহাসে রাজা লক্ষ্মণ সেন রাজদরবার ফেলে পেছন দরজা দিয়ে পালিয়েছিল। নতুন করে সেই ইতিহাসই দেখাল নারী হিটলার, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। এখন তার সব সহোযোগিরাই পলাতক। আজ সারা দেশের ছাত্র-জনতা জেগে রয়েছে। আমরা যে ইনসাফের বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছি, সেই ইনসাফের শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের ন্যায্য বিচারের আওতায় আনা হবে। আমরা হাসিনার মতো অন্যায্য কোনো বিচার করবো না। প্রত্যেককেই তার সঠিক প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সদস্য লে. কর্ণেল অব. দিদারুল আলম, লে. কর্ণেল অব. হেলাল উদ্দিন, মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন ও সহকারী সদস্যসচিব ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি প্রমুখ।
গণজমায়েতে আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির সহকারী সদস্যসচিব এম আমজাদ খান, ব্যারিস্টার আব্বাস খান নোমান, যুবপার্টির আহ্বায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, সদস্য সচিব হাদিউজ্জামান খোকন, সহকারী সদস্যসচিব ড. শাহেদুল ইসলাম, মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব সেলিম খান, ছাত্রপক্ষের আহবায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্যসচিব সফিউল বাসার, আহমেদ বারকাজ নাসির, উত্তরের যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুর রব জামিল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এনামুল হক, যুবপার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব শাহিনুর আক্তার শীলা ও পল্টন থানার আহবায়ক মুন্সি আব্দুল কাদের সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
(ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/জেবি/এসআইএস)