নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারের বিচার না হলে শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি হবে: প্রিন্স
প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০২৪, ২২:৩১
অবিলম্বে স্বৈরাচারী হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার শুরু করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারের বিচার না হলে শত শত শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানী এবং ছাত্র-জনতার সাথে প্রতারণা করা হবে। হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা দেশেও হবে বিদেশেও হবে।’
স্বৈরাচারী হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সদর ও বিকালে হালুয়াঘাট পৌর শহরে পৃথক অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘গণ বিপ্লবে পতনের পর ভারতে পালিয়ে সেখান থেকে শেখ হাসিনা জনগণের বিজয় নস্যাত করতে ষড়যন্ত্র করছেন। ভারত সরকারের হেফাজতে থেকে তিনি কীভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, বাংলাদেশের জনগণের তা জানার অধিকার আছে।’ তিনি বলেন, ‘হাসিনাপুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ও নানা ষড়যন্ত্র করছে। ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে জয় ভারতকে বাংলাদেশে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার পরিচয় দিয়েছেন।’
প্রিন্স বলেন, ‘সাক্ষাৎকারে এমন সব আহাম্মকি কথা বলে জয় আবারো প্রমাণ করলো জনগণ নয়, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস ভারত। ১৫ বছর ভারতের আনুকুল্যে ক্ষমতা জবরদখল করে গদিতে ছিল হাসিনা।’
বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘জনদ্রোহের গণ বিপ্লবে গদি হারিয়ে হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও আবারও আওয়ামী লীগকে গদিতে বসাতে ভারতকে নেতৃত্ব দেবার আহবান জানাচ্ছে হাসিনা পুত্র জয়।’ তিনি ভারতের প্রতি হাসিনা ও তার দোসরদের ভারতের মাটিতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে না দেওয়ার এবং জনগণের বিজয় নস্যাত করে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় বসানোর আওয়ামী আবদার না শোনার আহ্বান জানিয়ে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানান।
প্রিন্স বলেন, ‘অবশ্যই শেখ হাসিনাকে গণহত্যা, দুর্নীতি, লুটপাট, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণ এবং গুম-খুনের দায়ে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’
জনগণের বিজয় ছিনিয়ে নিতে শেখ হাসিনা, সজিব ওয়াজেদ জয় ও তাদের দোসররা ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে প্রিন্স বলেন, ‘তারা প্রতিবিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু জনগণ সব চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে গণতন্ত্রের পথে অভিযাত্রা অব্যাহত রাখতে বদ্ধ পরিকর। ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্টকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের চক্রান্ত সফল হতে দেওয়া হবে না।’
তিনি আওয়ামী লীগের সব সাবেক মন্ত্রী, এমপিসহ দায়ী নেতাদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘তারা সকলেই গণহত্যা, চুরি দুর্নীতি করেছে। এখন গণতন্ত্রের পথে অভিযাত্রা নস্যাত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এদের বাইরে রাখলে দেশ অস্থিতিশীল করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামী প্রেতাত্মাদেরকে অপসারণ করতে হবে।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগণকে নিয়েও হাসিনা ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে প্রিন্স বলেন, ‘ভারতে বসে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার কল্পিত কাহিনী প্রচার করে তাদেরকে ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার বানাতে চাচ্ছে।’
দলীয় নেতাকর্মীদের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান করেন এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করলে আওয়ামী লীগের নাম নিশানা মুছে ফেলা হবে। ইতোমধ্যেই জনগণের মধ্য থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি উঠতে শুরু করেছে। নিহত শত শত ছাত্র যুবককের রক্ত না শুকাতেই হত্যাকারীদের আস্ফালন জনগণ সহ্য করবে না।’
শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এর নেতৃত্বে বিশাল এক মিছিল হালুয়াঘাট বাজার প্রদক্ষিণ করে।
হালুয়াঘাট পৌর শহরের মহিলা মার্কেট প্রাঙ্গণে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আসলাম মিয়া বাবুল এর সভাপতিত্বে ও আবু হাসনাত বদরুল কবিরের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্র-গণ আন্দোলনের শহীদ বিজয় ফরাজীর পিতা সাইদুল ফরাজী, শহীদ রাজু আহমেদের মা রাহেলা খাতুন, গুলিবিদ্ধ মেহেদী হাসান ছাড়াও ময়মনসিংহউত্তর জেলা বিএনপির সদস্য হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ, আরফান আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আমজাদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন, আলী আশরাফ, উপজেলা বিএনপি নেতা অধ্যাপক মোফাজ্জল হোসেন, কাজী ফরিদ আহমেদ পলাশ, রফিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা মহিলা দলের সাধারণ হোসনে আরা নীলু, জেলা যুবদলের সহসভাপতি আবদুল আজিজ খান, তরিকুল ইসলাম চঞ্চল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আাসাদুজ্জামান আসিফ, উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান, যুবদল নেতা আবু নাসের, উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুল গণি, সাধারণ সম্পাদক মশিউজ্জামান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রুহুল আমিন খান, সদস্য সচিব আলিমুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রাব্বানী, উপজেলা ছাত্র দলের আহ্বায়ক নাইমুর আরেফীন পাপন, যুগ্ম আহ্বায়ক এম আর আল আমিন, মির্জা তাইয়্যেব, উপজেলা তাঁতী দলের আহ্বায়ক আকিকুল ইসলাম, মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।
এদিকে উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংক চত্বরে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে আনিসুর রহমান মানিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য মফিজ উদ্দিন, মোয়াজ্জেম হোসেন খান লিটন, ফরহাদ রাব্বানী সুমন, চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির, টোটন তালুকদার, সাবেক চেয়ারম্যান গাজিউর রহমান, মমতাজ উদ্দিন প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/জেবি/এসআইএস)