লক্ষ্মীপুরে চাহিদা বাড়ছে মাছ ধরার সরঞ্জামের, দাম তিনগুণ

ভারী বর্ষণে পানি জমেছে মাঠ-ঘাট, খাল-বিল ও নিচু জমিতে। আর পানিতে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছের ছড়াছড়ি। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় মাছ ধরার সরঞ্জামের চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে তিনগুণ। দেশীয় বাঁশ-বেত দিয়ে মাছ ধরার ফাঁদ তৈরির কারিগররা এবং বাড়ির মহিলারা অবসরে এসব উপকরণ তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন।
অন্যদিকে পেশাদার ও মৌসুমি জেলেরা এসব সরঞ্জাম দিয়ে মাছ ধরে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে নদী, নালা ও পুকুর-ডোবা সহ নিম্নাঞ্চলের মাটি প্রায় পানিতে টইটম্বুর হচ্ছে। এসব পানিতে বিভিন্ন নদ-নদী, পুকুর ডোবা থেকে ভেসে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এ সুযোগে লোকজন মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে।
উপজেলার হাট বাজারে গেলে দেখা যায়, হাতের তৈরি বিভিন্ন রকমের ছোট বড় আন্তা চাই ও পলই দোকানে সাজিয়ে রেখেছেন। আর তা কিনতে ভিড় করছেন অনেকেই। মাহালিরা এ সব জিনিস বিক্রি করছেন, তবে চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেশি নিচ্ছেন বলে জানান ক্রেতারা। ছোট চাই এক হাজার টাকা, মাঝারি দুই হাজার টাকা, বড় খোলসুন চার হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা বিক্রি করছেন। টেঁটা দাম দ্বিগুণ বেড়ে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। জালের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ কেজি প্রতি নেওয়া হচ্ছে ২৫০০ টাকা। বাজারে আসা বিক্রেতারা বলছেন, ‘সব জিনিসের দাম বেশি, আমাদের লাভ কম।’
বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে বাঁশের তৈরি ভোরং নামের একটি যন্ত্র। এলাকা ভেদে এই যন্ত্রটিকে খোলসুন বলা হয়। আর বই-পুস্তকের ভাষায় বিটে বলা হয়। পানির মধ্যে এই যন্ত্রটি রেখে দেয়া হয়। চলাচলের সময় ছোট ছোট মাছগুলো বাঁশের তৈরি এই ফাঁদের ভেতরে আটকা পড়ে। এটি গ্রামাঞ্চলের মাছ ধরার জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।
দিনের আলো শেষে রাতের অন্ধকার নামলেই হাতে টেঁটা ও টর্সলাইট নিয়ে রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে, বিলে দেখা মানুষের আনাগোনা। রাত গভীর হওয়ার সাথে থলে ভর্তি দেশীয় প্রজাতির মাছ শিকার করে নানা বয়সী মানুষ।
উপকরণ কিনতে আসা হাসন্দী গ্রামের টিপু বলেন, ‘আমাদের গ্রামের আশপাশের আবাদি জমি ও ছোট ছোট ডোবা নালা বর্ষার পানিতে ভরে গেছে। আর সেখানে দেখা মিলছে বিভিন্ন জাতের দেশি মাছ। আমি বর্ষাকালে শখ করে মাছ শিকার করি। তাই মাছ ধরার জন্য জাল ও টেঁটা কিনতে এসেছি।’
প্রায় ২০ বছর থেকে এই উপকরণ তৈরি ও বিক্রি করেন ফয়েজ। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আগের মতো তো আর বাঁশের উপকরণের বিক্রি নাই। এখন মানুষ আধুনিক হয়ে গেছে, তারা প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহার করেন। তবে বর্ষাকাল আসলে একটু বেশি মাছ ধরার উপকরণ বিক্রি হয়। একেকটি উপকরণ বিক্রি করে আকারভেদে একশ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। তবে আগের চেয়ে এসবে লাভ কমে গেছে শুধু বাপ-দাদার জন্য অনেকেই এখন এসব উপকরণ তৈরি ও বিক্রি করে।’
(ঢাকা টাইমস/০৬সেপ্টেম্বর/এসএ)

মন্তব্য করুন