পশ্চিমতীরে মার্কিন নারীকে গুলি করে মারল ইসরায়েলি সেনারা, ব্লিংকেনের নিন্দা
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিমতীরে শুক্রবার এক মার্কিন-তুর্কি নারীকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ২৬ বছর বয়সী ওই নারীর নাম আয়েসেনুর এজগি এইগি। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
টাইমস অব ইসরায়েল, আলজাজিরাসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানায়, শুক্রবার জুমার পর ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনপন্থীদের প্রতিবাদে অংশ নেন ওই মার্কিন নারী অ্যাক্টিভিস্ট। এসময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এসে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান আয়েসেনুর।
পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরের রাফিদিয়া হাসপাতালের পরিচালক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, মাথায় আঘাত পাওয়া অবস্থায় ওই নারীকে সংকটজনক অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। আমরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু আমরা বাঁচাতে পারিনি।
ফায়েজ আব্দেল জাবার নামের একজন প্যারামেডিক নাবলুসের কাছে বেইতা শহরে প্রতিবাদ জানানোর সময়ে ঠিক কী হয়েছিল তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, 'স্বাভাবিকভাবেই আমরা জাবাল সুবায়হ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করি, তখন বিদেশি অ্যাক্টিভিস্টরাও আমাদের সাথে যুক্ত হন। তার পর ইসরাইলি সেনাবাহিনী চলে আসে এবং দু’টি গুলি চালায়। একটি গুলি একজন তরুণকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। তবে দ্বিতীয় গুলিটা একজন বিদেশি অ্যাক্টিভিস্টের মাথা লক্ষ্য করে চালানো হয়।'
এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষে এইগির পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ব্লিংকেন বলেন, এই বিয়োগান্তক ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিন্দা জানাচ্ছে। আমাদের জানতে হবে ঠিক কী হয়েছিল আর সেটা জানার পর আমরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও উপসংহারে পৌঁছাবো।
তিনি বলেন, যেমনটি আমাকে আগেও বহুবার বলতে শুনেছেন যে আমেরিকান নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার চেয়ে আমার কাছে আর কোনো অগ্রাধিকারের বিষয় নেই, তা তারা বিশ্বের যেখানেই থাকুন না কেন। আমরা যখন আরো তথ্য পাবো, আমরা সেটা আপনাদের জানাব এবং প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র শন স্যাভেট এক বিবৃতিতে বলেন, 'আমরা আজ পশ্চিম তীরে আয়সেনুর এসগি এইগির নামের এই আমেরিকান নাগরিকের মৃত্যুতে গভীরভাবে বিচলিত বোধ করছি। আমরা তার পরিবার ও ভালোবাসার লোকদের কাছে আমাদের মর্ম বেদনা প্রকাশ করছি। আমরা আরও তথ্য লাভের জন্য ইসরায়েল সরকারের সাথে যোগাযোগ করেছি এবং এই ঘটনার তদন্তের অনুরোধ করেছি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এই ঘটনা সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যম এক্স ও টেলিগ্রামে দেয়া এক বিবৃতিতে লিখেছে, 'বেইতা এলাকার পাশে আজ ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কর্মতৎপরতা চালানোর সময়ে, সহিংস ঘটনার প্রধান উস্কানিদাতাকে লক্ষ্য করে গুলি চলায়। ওই লোক সৈন্যদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করে এবং তাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, 'আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) এই খবর যাচাই করে দেখছে যে ওই অঞ্চলে গুলি করায় একজন বিদেশি নাগরিক মারা গেছেন। এই ঘটনার বিস্তারিত এবং যে পরিস্থিতে তার ওপর আঘাত লাগে তা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।'
এদিকে ওই ঘটনার পর জেনিন থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সেখান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। দ্য এসোসিয়েটেড প্রেসের সাথে এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে জেনিনের গভর্নর কামাল আবু আল রাব বলেন, এটি ছিল আইডিএফের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অভিযান।
ঢাকাটাইমস/০৭সেপ্টেম্বর/ইএস