ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত দলিলের আকুতি

​​​​​​​চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:২৪
অ- অ+

আমি সুস্থ হতে চাই, কথা বলতে চাই, মানুষের সাথে চলতে চাই, কর্মজীবনে ফিরতে চাই।কাগজে লিখে এভাবেই আকুতি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশে গুলিতে আহত হয়ে বাকশক্তি হারানো দলিল উদ্দিন (৩৫)

ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায় পুলিশের ছোড়া একটি গুলি দলিল উদ্দিনের চোয়ালের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বাঁ পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। দাঁত মাড়ি ভেঙে যায়। ছিঁড়ে যায় জিহ্বা। সেই থেকে মুখে খাওয়া কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি।

একমাস ধরে ইশারায় কাগজে লিখে মনের ভাব প্রকাশ করছেন এই যুবক।

দলিল উদ্দিন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা দশমীপাড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মো. নূর উদ্দিনের ছেলে। তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাসের পর ২০১৪ সালে উত্তরার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরিতে যোগ দেন। ২০২২ সালে ছোট পরিসরে গার্মেন্টস পণ্যের যৌথ ব্যবসা শুরু করেন। তার স্ত্রী সিনথিয়া আরমিন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। স্বামী-স্ত্রী উত্তরা নম্বর সেক্টরের ফায়দাবাদে আট বছর ধরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।

স্ত্রী সিনথিয়া জানান, ‘উত্তরায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা আন্দোলন শুরু করলে দলিল উদ্দিন তাতে যোগ দেন। নিয়মিত কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে তিনি আগস্ট বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার খবরে ছাত্র-জনতা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলে সেখানে থাকা পুলিশ তাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছোড়ে। সময় একটি বুলেট দলিলের ডান কানের নিচে চোয়াল ভেদ করে মুখের দাঁত মাড়ি ভেঙে যায়, ছিঁড়ে যায় জিহ্বা। বাঁ চোয়ালে বেঁধে থাকা বুলেট নিজ হাতে টেনে বের করেন দলিল উদ্দিন। যা পরে কুর্মিটোলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে জমা দেওয়া হয়।

সিনথিয়া আরও জানান, ‘ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে সাত দিন চিকিৎসার পর ডান চোয়ালে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর তাকে মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে ১৯ আগস্ট দামুড়হুদার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

সিনথিয়া বলেন,‘ অস্ত্রোপচারের পর থেকেই ওষুধ তরল খাবার ছেঁকে নাকের ছিদ্রে বসানো পাইপ দিয়ে পেটে প্রবেশ করানো হচ্ছে। বর্তমানে ডেন্টাল সার্জন আবদুল হান্নানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছে। অস্ত্রোপচারের পর গত এক মাস ধরে লিখে অথবা ইশারায় মনের ভাব প্রকাশ করছেন দলিল।

দলিলের বাবা মো. নূর উদ্দিন বলেন, ‘এক মাস ধরে দলিলের চিকিৎসা চালাতে তিন লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। নিজেদের সঞ্চিত ধারদেনা করে এত দিন চিকিৎসা চালানো হয়েছে।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা চালাতে হবে। তবে আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় দলিলের চিকিৎসার অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

দলিল উদ্দিনের অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মো. আবদুল হান্নান বলেন, ‘মুখের ভেতরে বুলেট ঢুকে বড় ধরনের ফ্র্যাকচার হয়ে গেছে, যা রিপিয়ারিং করা হয়েছে। একটি সময় পর দলিল উদ্দিন কথাও বলতে পারবেন। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন।

(ঢাকাটাইমস/০৮সেপ্টেম্বর/পিএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আবারও এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি, কলকাতা বিমানবন্দরে আটকে গেল ফ্লাইট
যুদ্ধ থামাতে খামেনিকে সরাতে বললেন নেতানিয়াহু
অবিলম্বে তেহরান খালি করতে হবে, ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি
তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের বৈঠক নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সন্তোষ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা