ভিক্ষা ছেড়ে ঝাড়ু বানাচ্ছেন দৌলতদিয়ার প্রতিবন্ধীরা, হচ্ছেন স্বাবলম্বী
যে হাতে ভিক্ষা করতেন, সেই হাতেই এখন তৈরি হচ্ছে ফুলের ঝাড়ু। এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন দৌলতদিয়া ঘাটের প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকরা। ফুলঝাড়ু বানিয়ে এখন ভিক্ষার হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করেছেন তারা। ইন্টারনেট দেখে এ কাজে যুক্ত হয়েছেন তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এক সময় তারা ঘাটে ভিক্ষা করলেও বর্তমানে নিজেদের প্রচেষ্টায় ফুলের ঝাড়ু তৈরি করছেন। প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকদের তৈরি এসব ফুলের ঝাড়ু যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে। এর মাধ্যমে জীবন সংগ্রামের নতুন দিগন্তের স্বপ্ন দেখছেন তারা। তবে পুঁজির অভাবে তারা ফুল ঝাড়ুর কাঁচামাল কিনতে না পারার কষ্টও আছে তাদের।
এ জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
নতুন পেশার এ প্রতিবন্ধীরা জানান প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফেরিঘাট সড়কের অফিসে বসে ঝাড়ু তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। ঝাড়ু তৈরির পর নিজেরাই মার্কেটিং করছেন।
মানুষের গালমন্দ ও দুর্ব্যবহার সহ্য করে ভিক্ষার করে আয় করার চেয়ে নিজ উদ্যোগে কাজ করে কম আয়েও সম্মান আছে বলে মনে করছে প্রতিবন্ধীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজবাড়ীর ব্যস্ততম দৌলতদিয়া ঘাটে একসময় ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন প্রতিবন্ধীরা। তাদের মধ্যে ৪৭৪ জনকে নিয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা গঠিত হয়। ভিক্ষা করেই জীবন চলত তাদের।
কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই ঘাটের যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা কমেছে অনেক। আর তখনই বিপাকে ও হতাশার মধ্যে পড়েছিল প্রতিবন্ধীরা। পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের কষ্টের সীমা ছিল না। এখন ফুলঝাড়ু তৈরি করে অভাব ঘুচিয়ে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। আর এ ফুল ঝাড়ু তৈরি করে জীবন সংগ্রামের নতুন দিগন্তের স্বপ্ন দেখছেন তারা।
সমিতির ৪০জন প্রতিবন্ধী মিলে ইন্টারনেট দেখে তাদের সীমিত পুঁজি দিয়ে প্রথমে ঢাকা থেকে কিছু কাঁচামাল এনে ঝাড়ু তৈরি করে দোকানে দোকানে বিক্রি শুরু করেন।
প্রতিবন্ধীরা বলেন, ফুল ঝাড়ু তৈরির কাঁচামাল কক্সবাজার, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি এসব জায়গা থেকে আনতে হয়। প্রতিবন্ধী ছাড়া এখানে আমরা কোনো স্বাভাবিক মানুষদের নিয়োজিত করা হবে না বলে জানান তারা।
সিদ্দিক সরদার নামের এক প্রতিবন্ধী বলেন, ‘একসময় আমরা ভিক্ষা করতাম। এখন আমরা ভিক্ষা ছেড়ে ফুল ঝাড়ু তৈরি করছি। আগের থেকে এখন অনেক ভালো আছি।’
প্রতিবন্ধী রফিকুল বলেন, ‘ফুল ঝাড়ু তৈরি করতে আমরা যে যেমন কাজ পারি তেমনিভাবে করার চেষ্টা করি।’
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. মোন্নাব শেখ জানান, ‘আমাদের প্রতিবন্ধী সংস্থার কিছু সদস্য আছে তারা অটোরিকশা নিয়ে মার্কেটিং করছে। প্রতিবন্ধীরা ভিক্ষাবৃত্তি বাদ দিয়ে কাজে নিয়োজিত হয়েছে।
প্রতিবন্ধী সংস্থার সদস্যরা বলেন, ফুল ঝাড়ু তৈরির কাঁচামাল কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এসব জায়গা থেকে আনতে হয়। আমরা যারা প্রতিবন্ধী আছি তারাই সেখানে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাঁচামালগুলো এনে থাকি।
স্থানীয়রা বলেন, প্রতিবন্ধীরা এক সময় অন্যের হাতের টাকার দিকে তাকিয়ে থাকত। ঘাটের বিভিন্ন জায়গায় তারা ভিক্ষা করে চলত। কিন্তু এখন তারা কাজ করে খাচ্ছে। কাজের মাধ্যমে তাদের পরিবর্তন ঘটেছে। ফুল ঝাড়ু তৈরি করে প্রতিবন্ধীরা এখন জীবিকা নির্বাহ করছে। তাদের এ কাজকে এলাকার সবাই প্রশংসার চোখে দেখছে।
জেলা সমাজসেবা অফিসার রুবায়েত মো. ফেরদোস বলেন, ‘আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। ভিক্ষার হাত এখন কর্মীর হাত হয়েছে। ইতোমধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তর ওই সংস্থাকে তিন লাখ টাকা সাহায্য করেছে। তাদের এ কাজকে এলাকার সবাই প্রশংসা করছে। আমরা তাদের পাশে আছি।’
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, ‘আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। যে প্রতিবন্ধীরা ঘরের বাইরে বের হতে পারে না, স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে না, তারাও যেন কিছু একটা করে খেতে পারে। উপজেলা প্রশাসন থেকেও তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/০৮সেপ্টেম্বর/পিএস)