পূর্বাচলে হাসিনা-রেহানা পরিবারের ১০ কাঠার ৬ প্লট, বরাদ্দ বাতিলের দাবিতে রূপগঞ্জে বিক্ষোভ
‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় ১ টাকা পারিশ্রমিকে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন চলচ্চিত্র অভিনেতা আরেফিন শুভ। পরে জানা যায় রাজউকের আলোচিত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন।
এবার জানা গেল, এই প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নিয়েছিলেন স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি তার দুই সন্তান সজিব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও পেয়েছেন ১০ কাঠার প্লট। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে একইসঙ্গে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা এবং তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তিও পেয়েছেন বিলাসী এই প্লট।
সোমবার হাসিনা পরিবারের প্লট বরাদ্দ বাতিলের দাবিতে রূপগঞ্জে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে এলাবাসী ও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা। হাসিনার পতনের পর তার পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দকৃত প্লট বাতিলের দাবিতে ফুঁসে ওঠেছে স্থানীয় অধিবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত প্লট মালিকরা।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, নিজ নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তিনি একা নন, প্লট নিয়েছেন তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়) ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এছাড়াও প্লট বরাদ্দ প্রাপ্তদের তালিকায় আছেন হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার দুই ছেলেমেয়ে। রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের ১৩/এ ধারার ক্ষমতাবলে তারা প্লট বুঝে পান ২০২২ সালে।
বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনা নিজেকে অসহায় এবং নিঃস্ব বলে সভা-সমাবেশে রাজনৈতিক বক্তব্য দিলেও স্বয়ং নিজের নামে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। পূর্বাচলে প্রস্তাবিত কূটনৈতিক জোন ২৭ নম্বর সেক্টরে ২০৩ নম্বর রোডে তার প্লট নম্বর ০০৯। ২০২২ সালের ৩ আগস্ট তার নামে বরাদ্দপত্র ইস্যু করেছে রাজউক। অথচ প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই এখানে বরাদ্দ পাননি এখনো।
সোমবার দুপুরে পূর্বাচলের ২৭ নং সেক্টরে যুবদলের কেন্দ্রীয় সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়েছে। এতে যোগ দেন পূর্বাচলের শতাধিক অধিবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা।
রাজউকসূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনার বাসভবন ধানমন্ডির ৫৪ সুধা সদনের ঠিকানায় তার নামে বরাদ্দপত্র পাঠানো হয়। রাজউকের রেকর্ডরুমে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ফাইলগুলো বিশেষ চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। হাসিনার প্লট বরাদ্দের ফাইলের ওপর বড় ইংরেজি হরফে লেখা রয়েছে ভি-৩, পাতা ১৪১। ফাইলে শেখ হাসিনার স্বাক্ষরযুক্ত আবেদনপত্রের কপি, বরাদ্দপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ অন্যান্য কাগজপত্র রয়েছে।
রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরীফ স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত বরাদ্দপত্রে লেখা হয় ‘কাঠা প্রতি ৩ লাখ টাকা হিসাবে ১০ কাঠার প্লটের মোট মূল্য ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলো।’
শেখ হাসিনা ছাড়াও ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তাদের প্লট নম্বর যথাক্রমে ০১৫ এবং ০১৭।
এর মধ্যে জয়ের নামে প্লটের বরাদ্দপত্র জারি করা হয় ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর। পরে ১০ নভেম্বর প্লটের মালিকানাসংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। এর আগে ২ নভেম্বর পুতুলের নামেও ১০ কাঠা প্লটের বরাদ্দপত্র ইস্যু করা হয়। এতে এস্টেট ও ভূমি-৩ শাখার তৎকালীন উপপরিচালক হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে।
শুধু হাসিনা ও তার ছেলে-মেয়ে নন; পূর্বাচল প্লকল্পে ১০ কাঠা করে প্লট নিয়েছেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার ছেলে মেয়েরাও। তাদের নামেও যথারীতি প্লট বরাদ্দ করা হয় ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডের একই জায়গায়। সেখানে শেখ রেহানার প্লট নম্বর ০১৩, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের প্লট নম্বর ০১১ ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের প্লট নম্বর ০১৯।
(ঢাকাটাইমস/০৯সেপ্টেম্বর/এসআইএস)