যারা দেশকে পুনরায় ফ্যাসিস্ট কাঠামোয় নিতে চায় তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে: সাকি
বাংলাদেশকে যারা আবার পুরনো ফ্যাসিস্ট কাঠামোয় ফেরত নিতে চায় তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি ২৪ গণঅভ্যুত্থানে শহীদ, আহত ও নিখোঁজদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নে সরকারকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহবান জানান।
শুক্রবার বিকালে মোহাম্মদপুর বেঙ্গলী মিডিয়াম হাইস্কুলে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে মোহাম্মদপুর-আদাবর অঞ্চলে আহত-নিখোঁজ ও শহীদদের তালিকা প্রকাশ ও স্মরণসভায় অংশ নিয়ে কথা বলেন জোনায়েদ সাকি।
স্মরণসভায় জানানো হয়, গত ২৩ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গণসংহতি আন্দোলনের ক্যাম্প থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মোহাম্মদপুর-আদাবর অঞ্চলে ২২ জন নিহত, ২২৭ জন আহত ও ২ জনের নিখোঁজ হবার তথ্য পাওয়া গেছে।
মোহাম্মদপুর থানার সংগঠক ফাইয়াজ ফিরোজের সভাপতিত্বে ও গণসংহতি আন্দোলনের সংগঠক হাসান আল মেহেদীর সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যবৃন্দ, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমম্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, বিশিষ্ট সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, উত্তরের আহ্বায়ক মনিরুল হুদা বাবন, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী আবু হানীফা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক নুসরাত হক, মোহাম্মদপুর থানা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি সজল আহমেদ প্রমুখ।
শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারকে অতিদ্রুত পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। আহতদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলো যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে, আমরা সরকারকে দ্রুত আহতদের চিকিৎসায় মনোযোগী হবার আহ্বান জানাচ্ছি এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, ‘যে মানুষ সকল মানুষের প্রয়োজনে, জনগণের প্রয়োজনে, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে জীবন দিতে পর্যন্ত কুণ্ঠাবোধ করেননি তারা এই জাতির জন্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মতরে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে৷ অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রথম দায় তাদেরকে জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়া এবং প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচার করা।’
এছাড়াও তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে ন্যায়বিচারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে৷ যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত শেখ হাসিনাসহ তাদের প্রত্যেকের বিচার করতে হবে৷’
গার্মেন্টসে শ্রমিকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির দাবিতে শেখ হাসিনার আমল থেকে শ্রমিকরা লড়াই করেছেন; জীবন দিয়েছেন৷ তাই অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে শ্রমিকের নায্য মজুরির দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাই৷ অন্যদিকে শ্রমিক ভাই-বোনদের বলি, এই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের পাশাপাশি জনতাও অংশগ্রহণ করেছেন৷ জনতার শ্রমিক-কৃষক-শ্রমজীবী মানুষও রয়েছেন৷ সাভার-আশুলিয়া অঞ্চলে শ্রমিকরা জীবন বাজি রেখে ফ্যাসিস্টদের প্রতিরোধ করেছেন তাই বলি পতিত ফ্যাসিস্টরা যাতে কোনো ষড়যন্ত্র করতে না পারে সে ব্যাপারেও শ্রমিকদের সচেতন থাকতে হবে৷’
জোনায়েদ সাকি আরেও বলেন, ‘বাংলাদেশর মানুষ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য লড়াই করছে৷ আমরা দীর্ঘদিন ধরেই সেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে যারা আবার পুরনো ফ্যাসিস্ট কাঠামোয় ফেরত নিতে চায় তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে৷ জনগণের আকাঙ্খা পূরণে নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে৷’
গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে এক বর্বর শাসন কায়েম করেছিলো। ছাত্র জনতার আন্দোলনে এমনকি যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে দেয়নি। তাই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হবে এই শহীদদের পূর্ণ তালিকা করা, আহতদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।’
সৈকত আরিফ তার বক্তব্যে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে হাসিনার সরকার আমাদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে, আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, নাগরিক হিসেবে আমাদের সমস্ত মর্যাদা কেড়ে নিয়ে আমাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছে সেই সমস্ত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ২৪ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান। জনগণের সেই আকাঙ্খাকে ধারণ করে বাংলাদেশে জনগণের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তা যদি পূরণ করতে সরকার ব্যর্থ হয় তাহলে জনগণ আবার তার অধিকারের জন্য রাজপথে লড়াই করবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ফাইয়াজ ফিরোজ বলেন, ‘২৪ গণঅভ্যুত্থানে শহীদ, আহত ও নিখোঁজদের তালিকা প্রণয়নে কমিশন গঠন করতে হবে। একজন শহীদও যাতে তালিকার বাইরে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।’
স্মরণ সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য আলিফ দেওয়ান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মাহবুব রতন প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১৩সেপ্টেম্বর/জেবি/এসআইএস)