ডেঙ্গু জ্বর ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের দাওয়াই ড্রাগন ফল

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩২

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

সুস্বাদু ড্রাগন ফল সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। সারা বছরই বাংলাদেশে এখন ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। একটা সময় এই ফল বাইরে থেকে আসত বেশি। এখন দেশেই চাষ হয়। এই ফলের উপকারিতা অনেক। ড্রাগন ফলে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। যা রক্তে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেটের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় এই ফল খুবই কার্যকর। আমাদের অনেক রোগী সুফল পেয়েছেন। পেঁপে পাতার রসের সঙ্গে এটাও অনেকে খাচ্ছেন। তাছাড়া এই ফলে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে। তাই অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্য ভাল। যদিও ডেঙ্গুর ওষুধ হিসাবেই বেশি বিজ্ঞাপিত হচ্ছে এই ফল। বিক্রেতারাও এই বিষয়টা ‘হাইলাইট করছেন। ড্রাগন ফলে রয়েছে আঁশজাতীয় উপাদান, যা আমাদের হজমে সাহায্য করে। দীর্ঘ সময় পেট ভরে রাখে। ফলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে। পরিণামে কমে যায় রক্তের বাড়তি চিনি। নিয়ন্ত্রণে থাকে ডায়াবেটিস। এমনি আরও অনেক গুণাগুণ ড্রাগন ফলে রয়েছে।

 

 

ড্রাগন ফলের বাইরের খোসা দেখতে রূপকথার গল্পের ড্রাগনের পিঠের মতো। রূপকথার ড্রাগনের মতো কিছুটা মিল থাকার জন্য ড্রাগন ফল হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে সুস্বাদু ড্রাগন ফল সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। চিকিৎসকেরা ড্রাগন ফলকে ‘ট্রপিক্যাল সুপারফুড’ বলছেন। ড্রাগন ফলের উপকারিতা বেশ চমকে ওঠার মতো। ডেঙ্গু মোকাবিলায় অন্যতম ভরসা হয়ে উঠছে ড্রাগন ফল। ডায়াবেটিস ও প্রস্টেট ক্যানসারের মোকাবিলায়ও এই ফল বেশ কার্যকর।

পুষ্টিবিশারদরা জানিয়েছেন, ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১, বি২, বি৩ থাকে। ফলে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় এই ফল খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এই ফলে থাকা ক্যারোটিন, লাইকোপেন প্রস্টেট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে ড্রাগন ফলকে সব রোগের মহৌষধ বলা হয়।

চিকিৎসকদের মতে, ড্রাগন ফলে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। যা রক্তে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেটের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় এই ফল খুবই কার্যকর। আমাদের অনেক রোগী সুফল পেয়েছেন। তাছাড়া এই ফলে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে। তাই অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্য ভাল।

ড্রাগন ফ্রুট বা ড্রাগন ফল একধরনের ক্যাকটাসগাছের ফল। ড্রাগন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হাইলোসেরিয়াস আনডেটাস। এ ফলের অন্য নাম পিটাইয়া। চীনে এই ফলের নাম হুয়ো লং গুয়ো, ভিয়েতনামে থানহ লং। ড্রাগন ফলের জন্ম মধ্য আমেরিকায়। দক্ষিণ এশিয়ার মালয়েশিয়ায় ফলটি প্রবর্তিত হয় বিংশ শতাব্দীর দিকে। বর্তমানে ভিয়েতনামে ফলটি বেশি চাষ হচ্ছে। ভিয়েতনাম ছাড়াও তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, চীন, ইসরাইল, অস্ট্রেলিয়াতেও চাষ হচ্ছে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম ড্রাগন ফলের গাছ নিয়ে আসা হয়। এখন বাংলাদেশের নাটোর, পাবনা, বগুড়া, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় প্রচুর ফলন হচ্ছে।

ড্রাগন ফল দেখতে সুন্দর, সুস্বাদু ও আকর্ষণীয়। ফলের ভেতর কালোজিরার মতো ছোট ছোট বীজ থাকে। আমাদের দেশে যে সমস্ত বিদেশী ফলগুলো চাষ করা হয় তার মধ্যে ড্রাগন ফল অন্যতম। ড্রাগন ফল উজ্জ্বল গোলাপি বা লাল রঙের এবং আকারে বেশ বড়। একটি গাছ থেকে ১ মণ ফল আহরণ সম্ভব এবং ২০ বছর যাবৎ ফল আহরণ করা যায়। ড্রাগন ফলটিকে দুই ভাগে কেটে খুব সহজেই চামচ দিয়ে ভেতরের শাঁস খাওয়া যায়। তাছাড়া মিল্কশেক, কিংবা স্মুদি তৈরি করেও ড্রাগন ফল উপভোগ করা যায়।

সাধারণত তিন জাতের ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। যথা- ১. লাল ড্রাগন ফল। ২. কোস্টারিক ড্রাগন ফল। ৩. হলুদ ড্রাগন ফল। লাল ড্রাগন ফলের খোসা লাল হলেও শাঁস সাদা রঙের হয়। কোস্টারিক ড্রাগন ফলের খোসা ও শাঁস উভয়ই লাল রঙের এবং হলুদ ড্রাগন ফলের খোসা হলুদ হলেও ভেতরের আঁশটা সাদা রঙের হয়ে থাকে। বিভিন্ন রঙের মধ্যে গোলাপি বা লাল রঙের ড্রাগন ফল আমাদের দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে চাষ করা হচ্ছে।

 

ড্রাগন ফলে রয়েছে ৮০ থেকে ৯০ গ্রাম পানি। এছাড়া রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, নায়াসিন, ভিটামিন সি।

 

ড্রাগন ফল হলো প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ একটি ফল। এর ক্যালরি মাত্রাও তুলনামূলক অনেকটাই কম। এতে যথেষ্ট পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার রয়েছে। এক কাপ (২২৭ গ্রাম) ড্রাগন ফলে, ক্যালোরির মাত্রা ১৩৬, প্রোটিনের মাত্রা ৩ গ্রাম, ফ্যাটের মাত্রা শূন্য, ফাইবারের মাত্রা ৭ গ্রাম, আয়রনের মাত্রা ৮ শতাংশ, ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা ১৮ শতাংশ, ভিটামিন-সি এর মাত্রা ৯ শতাংশ, ভিটামিন-ই এর মাত্রা ৪ শতাংশ।

 

ড্রাগন ফলে ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড এবং বিটাসায়ানিন-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এগুলো কোষগুলোকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করে।

 

ড্রাগন ফলের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। জানা যাক সেগুলো কী কী-

 

ডেঙ্গুর চিকিৎসায় কার্যকর

চিকিৎসকদের মতে, ড্রাগন ফলে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। যা রক্তে অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় এই ফল খুবই কার্যকর। আমাদের অনেক রোগী সুফল পেয়েছেন। পেঁপে পাতার রসের সঙ্গে এটাও অনেকে খাচ্ছেন। তাছাড়া এই ফলে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে। তাই অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্য ভাল। যদিও ডেঙ্গুর ওষুধ হিসাবেই বেশি বিজ্ঞাপিত হচ্ছে এই ফল। বিক্রেতারাও এই বিষয়টা ‘হাইলাইট’ করছেন।

 

কোলস্টেরল কমায়

খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর মাধ্যমে হৃদযন্ত্র ভাল রাখে ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফল খেলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে অনেকসময় রক্তনালী আটকে যায়। তখন মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলে বাধা পড়ে। যার থেকেই স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাওয়ার খেলে যে কোনও সময়ে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখুন ড্রাগন ফল। তাহলেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে কোলেস্টেরল ।

 

ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়

ড্রাগন ফল কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। তাছাড়া এ ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতেও সহায়তা করে। এটি বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ক্যানসার, ডায়াবেটিস, অ্যালজাইমার এবং পারকিনসন-এর মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

 

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়

নিয়মিত পরিমিত পরিমাণ ড্রাগন ফ্রুট গ্রহণে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। এতে করে টাইপ-২ ডায়বেটিস দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে। একটি গবেষণা জানাচ্ছে, যারা ড্রাগন ফ্রুট নিয়মিত গ্রহণ করেছেন তাদের রক্তে প্রি-ডায়বেটিক লক্ষণসমূহ তুলনামূলক কম দেখা গেছে যারা গ্রহণ করেননি তাদের চেয়ে। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ড্রাগন ফলের নিয়মিত সেবন, রক্তে শর্করার ভারসাম্যতা বজায় থাকে।

 

চোখের ক্ষেত্রে উপকারী

ড্রাগন ফ্রুট সাইটোক্রোম পিফোর৫০ নামক প্রোটিন তৈরি করে মানবশরীরে। যা আমাদের যকৃততে পাওয়া যায়। এই প্রোটিনের সাথে কঞ্জেনিটাল গ্লুকোমার সম্পর্ক রয়েছে। ফুড ক্যাম্রিস্ট্রি জার্নালে প্রকাশিত তথ্য জানাচ্ছে, এতে থাকা বেটা-ক্যারোটিন চোখকে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষার্থেও কাজ করে। ড্রাগন ফলে বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে। এই ফল চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- ছানি পড়ে যাওয়া এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

 

হার্টের জন্য উপকারী

ড্রাগন ফলের বীজ হার্টের জন্য উপকারী ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৯ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এই ফল খেলে হার্টের রোগের ঝুঁকি ও জয়েন্টের ব্যথা কমে যায়। এটি হার্ট ভালো রাখার পাশাপাশি রক্তচাপ ও ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।

 

বার্ধক্যের লক্ষণ প্রতিরোধ করে

অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, চাপ, দূষণ এবং খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণে অকাল বার্ধক্যের সমস্যা আজ খুব সাধারণ ব্যাপার। ড্রাগন ফল ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ হওয়ায়, এটি ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে সহায়তা করে। তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে দিনে একবার এর জুস খেতেই পারেন।

 

হজমের জন্য ভালো

 

ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফলটি অনেকটা পিচ্ছিলজাতীয়। তাই এটি হজমে অনেক ভালো।

 

হাড়ের জন্য ভালো

অধিকাংশ ফলের চেয়ে ড্রাগন ফলে ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকে। এই ফলে প্রায় ১৮ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম বিদ্যমান, যা হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে এবং হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। ফলে জয়েন্টের ব্যথা, ফ্র্যাকচার কিংবা ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিও অনেকটাই কমে যায়।

 

চুল পড়া আটকায়

আয়রন ঘাটতির কারণে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে চুল পড়া কমতে পারে। এই ফল আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতার অন্যান্য উপসর্গও প্রশমিত করতে পারে, যেমন – অত্যধিক ক্লান্তি, ত্বকের বিবর্ণতা, মনোনিবেশে সমস্যা, মাথাব্যথা ও হাত-পায়ে ঠান্ডা অনুভূতি।

 

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

ড্রাগন ফল ভিটামিন সি দ্বারা সমৃদ্ধ। এই ফলটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে পারে। এটি ওজন বজায় রাখতে বা হ্রাস করতেও সহায়তা করতে পারে। কারণ ৮০ শতাংশই পানি। ড্রাগন এমন একটি ফল যা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ, যা নিশ্চিতভাবে আপনার অন্ত্রের গতিবিধিকেও নিয়ন্ত্রণ করবে।

 

গর্ভবতী নারীদের আদর্শ ফল

ড্রাগন ফলে রয়েছে ভিটামিন বি, ফোলেট এবং আয়রন রয়েছে, তাই এটি গর্ভবতী নারীদের জন্য আদর্শ ফল। ভিটামিন বি এবং ফোলেট জন্মগত ত্রুটি রোধ করতে সহায়তা করে এবং গর্ভাবস্থায় শক্তি সরবরাহ করে। তাছাড়া এতে থাকা ক্যালসিয়াম ভ্রুণের হাড়ের বিকাশের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ড্রাগন ফলে ম্যাগনেসিয়ামও রয়েছে, যা নারীদের পোস্টমেনোপজাল জটিলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।

 

(ঢাকাটাইমস/১৪ সেপ্টেম্বর/আরজেড)