সরকারি কোয়ার্টারে থাকলেও ভাড়া দেন না আখাউড়ার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী উপজেলা পরিষদের সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করেন। এদের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাসহ প্রথম শ্রেণির কয়েকজন কর্মকর্তাও রয়েছেন। কেউ স্বপরিবারে কেউ বা ব্যাচেলর হিসেবে এসব কোয়ার্টারে বসবাস করে আসছেন বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু তাদের কারও নামে বাসা বরাদ্দ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি কোয়ার্টারে বসবাসরত দুই কর্মকর্তা ছাড়া কেউ বাসাভাড়া দেন না। অথচ প্রতিবছর ভবনগুলোর বিদুৎ বিল ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ লাখ লাখ টাকা খরচ করা হয়। এতে প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অথচ, সরকারি সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বেতনের সঙ্গে বেসিক অনুযায়ী বাসাভাড়াও দেওয়া হয়।
জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের অধীনে দুতলা তিনটি সরকারি কোয়ার্টার রয়েছে। প্রতিটিতে দুটি করে ফ্ল্যাট আছে। এছাড়া ১০ রুমের একটি দ্বিতল ডরমিটরি রয়েছে। তিনটি কোয়ার্টার ও ডরমেটরিতে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা থাকেন। এর মধ্যে, উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামারসহ আরও অনেকে।
এছাড়া উপজেলা পল্লী উন্নয়ন (বিআরডিবি) কর্মকর্তার অধীনে তিনটি কোয়ার্টার। এসব কোয়ার্টারের স্বচ্ছতা নিয়েও অভিযোগ আছে। কাগজে কলমে পল্লী উন্নয়ন কর্মচারীদের নামে বাসাগুলো বরাদ্দ থাকলেও থাকেন অন্যরা।
নাম প্রকাশে এক কর্মকর্তা বলেন, বাসাগুলো জরাজীর্ণ। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। কোনো রকমে থাকি। বাসার যে অবস্থা কেউ এককভাবে বরাদ্দ নিবে না। একটি ফ্ল্যাটে আমরা কয়েকজন মিলে মেস করে থাকি। বাসাগুলোকে ডরমেটরির মত ভাড়া নিলে ভাড়া দিতে পারবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালে সরকারি তিনটি কোয়ার্টার মেরামত বাবদ ১৫ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। বাস্তবে কতটা মেরামত হয়েছে বলাই বাহুল্য। এভাবে সরকারি অর্থ লুটপাট করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। কৌশলে বাসাগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।
সরেজমিন উপজেলা ডরমেটরিতে গিয়ে জানা গেছে, ১০টি রুমে ১৭ জন সরকারি চাকুরিজীবী ব্যাচেলর হিসেবে থাকেন। এদের মধ্যে রয়েছে প্রকৌশল অফিস, বিআরডিবি অফিস, দারিদ্র বিমোচনসহ অন্য অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী। তাদের মধ্যে যুব উন্নয়ন অফিসের একজন ছাড়া অন্যরা রুমের ভাড়া দেন না।
আখাউড়া উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আবু ইউছুফ নুরুল্লাহ বলেন, রিপোর্ট অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের তহবিলে দুইজনের ভাড়া জমা হয়। তারা হলেন আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা। এছাড়া উপজেলার কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন থেকে বাড়ি ভাড়া বাবদ টাকা কাটা হয় না।
উপজেলা সরকারি কোয়ার্টার বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম সুমন বলেন, সরকারি কোয়ার্টারগুলো জরাজীর্ণ। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। বাসাগুলোতে বসবাসের পরিবেশ নাই। তাই কেউ বরাদ্দ নেয় না। যারা থাকছেন তারা অবৈধভাবে থাকছেন। তাহলে ১৫ লাখ টাকা খরচ করে মেরামত করা হলো কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনে করা হয়েছিল কর্মকর্তারা বরাদ্দ নিবেন কিন্তু নেয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভিন রুহি বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। আগে কে কীভাবে সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করেছে জানি না। আমি সবাইকে বলেছি সরকারি কোয়ার্টারে থাকতে হলে বাসা বরাদ্দ নিয়ে বৈধভাবে থাকতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/পিএস)