পাটের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হাসি নেই ফরিদপুরের চাষিদের মুখে
পাট উৎপাদনের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুর। কিন্তু চলতি মৌসুমে পাটের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে মুখে হাসি ফুটছে না চাষিদের। ভালো দাম না থাকায় ভরা মৌসুমেও বাজারে সরবরাহ কমেছে পাটের।
ফরিদপুরে পাটের বাজার হিসেবে খ্যাত কানাইপুর। সপ্তাহের শুক্র ও মঙ্গলবার বসে এই হাট। দূর দূরান্ত থেকে ক্রেতারা এই হাটে আসে পাট কেনার জন্য।
সরেজমিন মঙ্গলবার সকালে বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাট বেচা কেনায় ছিল মন্দাভাব। অথচ এই বাজারে যেকোনো মৌসুমে এ সময় বাজার ভরা ছিল কৃষকের পাট। সকালে বাজারটিতে গিয়ে দেখা যায় অল্প কিছু চাষির ভ্যানে করে, কেউ মাথায় করে,তাদের কষ্টার্জিত কৃষি পণ্যটি বিক্রি করতে নিয়ে এসেছে বাজারে। পরিবারের চাহিদা মেটাতে বাধ্য হয়ে বিক্রি করছেন বলে জানান তারা। তবে এ অঞ্চলে পাটের মান ভালো হওয়ার পরও ন্যায্য মূল্য না পাওয়া হতাশ তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন বাজার ও আড়তগুলোতে ভালো মানের একমন পাট দুই হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় পাট চাষিরা জানান, খরার কারণে পাট গাছ বড় ও মোটা হতে পারেনি। যে কারণে পাটের আঁশ কম হওয়ায় ফলন অনেক কমে গেছে। এছাড়া বীজ, সার, তেল, ওষুধ আর মজুরির খরচ বেশির কারণে এই দামে পাট বিক্রি করে লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।
তারা জানান, এই মৌসুমে সার, ওষুধ, মজুরির দাম বেশি হওয়ায় পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তার ওপর আবার সময় মত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনও হয়নি। বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা স্থানীয় পাট চাষি মোতালেব মুন্সী, বিল্লাল মাতবর ও খলিল মোল্লা জানান, প্রতি বছরের মত এবারও লোকসানের আশঙ্কা নিয়েই নিজেদের চাষ যোগ্য সবটুকু জমিতেই পাট বুনেছেন তারা। এবার পুরো বর্ষাকাল ছিল অনাবৃষ্টি। সে সময় ডিজেল পুড়িয়ে ক্ষেতে সেচ দিতে হয়েছে, পাট কাটার পর আশ পাশের খাল নালায় পানি না থাকায় জাগ দিতে ভ্যানে করে দুরে নিতে হয়েছে পাট গাছের আঁটি, জাগ দেওয়ার পরও শ্রমিক দিয়ে আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোর জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে, পরিবারের সকল সদস্য মিলে যে পরিমাণ শ্রম ও সময় ব্যয় করেছে, সেটা ধান বা মৌসুমের অন্য যে কোনো ফসলের জন্য করলে অনেক লাভ হতো। আগামী বছর আর পাট চাষ করবেন না বলে জানান তারা।
তাদের মতই জেলার বিভিন্ন এলাকার পাট চাষিরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে যে দরে পাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে তাতে তাদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। উৎপাদন ভালো না হওয়ায় এই দরে পোষাচ্ছে না তাদের।
কানাইপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী আনন্দ সাহা, চান মিয়া ও জলিল শেখ জানান, ভরা মৌসুমে বাজারে পাটের উপস্থিতি অনেক কম, হাটের দিন যেখানে একজন ব্যবসায়ী পাঁচ থেকে সাত ট্রাক পাট ক্রয় করতো, সেখানে দুই থেকে তিন ট্রাক পাট পাওয়া মুশকিল হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রমতে, এবার জেলায় ৮৬ হাজার ৫শ ২৪ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে । উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল দুই লাখ ১৬ হাজার ৬১ মে.টন। তবে উৎপাদন কম হলেও পাটের গুণগতমান যে কোনো জেলার তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহাদুজ্জামান জানান, ‘জেলার মাটি ও আবহাওয়া পাট চাষে উপযোগী হওয়ায় এ অঞ্চলে উন্নত মানের পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে মন প্রতি ২৮শ থেকে ৩২শ টাকা দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। যদিও উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক বেড়েছে, তবু পাট চাষে আগ্রহ এখনও আছে চাষিদের। সরকার তাদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে আসছে, আমরা সব সময় তাদের পাশে আছি।
(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/পিএস)