এনটিসির চা বাগানে মজুরি পাচ্ছেন না শ্রমিকরা, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে কমলগঞ্জে ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন চা বাগানের শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে মজুরি না পাওয়ায় অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। অনেকের ঘরেই খাবার নেই। শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসব বোনাস পাবেন কি না সেটা নিয়েও শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।
মালিকপক্ষ বলছে, সরকার পতনের পর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে যাওয়ায় মজুরি দিতে পারেনি না তারা। তবে পূজার আগে দ্রুতই মজুরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কমলগঞ্জের এনটিসির মালিকানাধীন ৮টি চা বাগান রয়েছে। এগুলো হলো পাত্রখোলা চা বাগান, চাম্পা রায় চা বাগান, কুরমা চা বাগান, কুরঞ্জি চা বাগান, বাঘা ছড়া চা বাগান, মাধবপুর চা বাগান, পদ্ম ছড়া চা বাগান ও মদন মোহনপুর চা বাগান।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যমতে, এই ৮টি চা বাগানে প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মজুরির ওপর আরও প্রায় ২০ হাজার মানুষের ভরণপোষণ নির্ভর করে। সরকার পতনের পর মাত্র দুই সপ্তাহ মজুরি পেয়েছিলেন তারা।
পাত্রখোলা চা বাগানের নারী চা শ্রমিক রত্না বাউরী বলেন, ঘরে কোনো খাবার নেই, আমরা শ্রমিকরা সপ্তাহে যে টাকা পাই সেটা দিয়েই কোনো রকমে সংসারটা টেনে নিয়ে যাই। এখন হাতে টাকাও নেই, পরিবারের লোকজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। মজুরি বন্ধ থাকায় বাগানের কোনো দোকান থেকে বাকিতেও কোনো কিছু ক্রয় করতে পারছি না।’
কমলগঞ্জ চা যুব পরিষদের সদস্য সচিব সজল কৈরি বলেন, জেলা প্রশাসকের সাথে আমাদের বরাবর যোগাযোগ হচ্ছে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন সমাধান হবে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বাগান বন্ধ না রেখে এখনো শ্রমিকরা কাজ করছে। যদি পূজার আগে চা শ্রমিকদের পাওনা না দেওয়া হয় তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।’
কুরমা চা বাগানের বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নারদ পাসী বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা মজুরি না পাওয়ায় খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। জমানো টাকা সব শেষ। শ্রমিকদের আমরা অনেক বুঝিয়ে রেখেছি। শ্রমিকরা মজুরি না পেলেও কাজে ঠিকই যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে শ্রমিকরাও আন্দালন সংগ্রামের দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা মালিক পক্ষের কাছে জোর দাবিজানাই, দ্রুত যেন মজুরীর ব্যবস্থা করা হয়।’
কমলগঞ্জসহ সারাদেশে এনটিসির প্রায় ১৬টি চা বাগান রয়েছে। সবগুলো চা-বাগানেই একই অবস্থা বলে জানান বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারন সম্পাদক রামভজন কৈরি। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় প্রতিদিনই মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি। শ্রমিকদের মজুরি যেন দ্রুত দেওয়া হয় সেজন্য আমরা সরকারের প্রতিনিধিদের সাথেও কয়েক দফা মিটিং করেছি। শ্রমিকরা শুধু রেশন পাচ্ছেন। শ্রমিকরা যদি কঠোর আন্দোলনে যায় তাতে চা বাগানেরই ক্ষতি।’
ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এমদাদুল হক বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আমাদের বোর্ড প্রায় ভেঙে গেছে। তবে গত মঙ্গলবার আমাদের একটা মিটিং হয়েছে। চা শ্রমিকদের আর সমস্যা থাকবে না। দ্রুত তাদের বেতন-বোনাস দেওয়া হবে।’৩২ বছরের চাকরিজীবনে চা শ্রমিকদের এই সমস্যা দেখেননি উল্লেখ করে এমদাদুল হক আরও বলেন, ‘শুধু পর্ষদ ভেঙে যাওয়ায় এই সমস্যা হয়েছে। তাদের (শ্রমিকদের) কষ্ট আমি বুঝি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে চা বাগানগুলোতে মজুরি ও পূজার বোনাস দেওয়া হবে।’
(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/মোআ)

মন্তব্য করুন