১৬ বছর প্রশাসনের যারা লুটপাট করেছে তাদের বরখাস্ত করতে হবে: মির্জা ফখরুল
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গত ১৬ বছরে যেসব ভূত দেশে লুটপাট চালিয়েছে তারা এখনো প্রশাসনে আছে জানিয়ে তাদেরকে বরখাস্ত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে শিক্ষক সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া। সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের পুলিশের মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় যারা নির্যাতিত হয়েছে এসব মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এসব মিথ্যা মামলা যেন নিষ্পত্তি হয়ে যায় এজন্য সবাইকে জোর গলায় কথা বলতে হবে। আমাদের নিজেদের ভাগ্য আমাদের নিজেদেরকেই তৈরি করতে হবে, দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ড. ইউনূসের সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি, আমরা তাকে সময় দিচ্ছি এবং দেব। আমরা সে পর্যন্ত তাদের সময় দেব, যৌক্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা করতে যে সময় লাগে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমরা আবার মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ দেখতে চাই না। আমরা সুস্থ ও উদারপন্থি গণতন্ত্র দেখতে চাই, এজন্য তাদের সঠিক মানুষ মনে করে দায়িত্ব দিয়েছি।
অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়া।
এসময় খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, পারিবারিকভাবে আমরা শিক্ষক পরিবার। আমার বাবা, আমি, আমার বড় বোন, আমার ছোট বোন শিক্ষকতা করেছি। আমাদের পরিবারের ৯০ শতাংশ মানুষ শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত। একারণে আপনাদের সমস্যা আমরা বুঝি, সে কারণেই আপনাদের জন্য কথা বলতে আমরা দ্বিধাবোধ করি না।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর পার হওয়ার পরও শিক্ষা ব্যবস্থা সবচেয়ে দুর্বল জায়গা মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। কোনো জাতিকে উপরে উঠতে গেলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সেই শিক্ষা আসে পড়াশোনা থেকে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম, তারা অত্যাচার করেছিল, গুলি করে লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনী কী পরিমাণ নৃশংসতা চালিয়েছিল সেটা আমি জানি। আমি এটা ভুলতে পারি না। কারণ আমি নিজেও মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম।
তিনি বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা সেই গণতন্ত্রকে বার বার ধ্বংস করেছি। যারা দাবি করেছিল তারা গণতন্ত্রের পুরোধা, তাদের কারণেই দুইবার এই গণতন্ত্র নিহত হয়েছে। তারপর থেকে পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্র চর্চা যেন না হয়, মানুষের মৌলিক অধিকারের দাবি যেন করতে না পারে সে জন্য গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন আমরা বের হয়ে আসছি, আমাদের এই দাবি মানতে হবে, ঐ দাবি মানতে হবে। আগে কিন্তু আমরা বের হতে পারিনি। আপনারা বলবেন, আমাদের বের হতে দেওয়া হয়নি। ছাত্রদেরকেও বাধ্য করা হয়েছিল চুপ থাকার জন্য। আমাদেরও বার বার জেলে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও আমরা রুখে দাঁড়িয়েছি।
জাতীয়করণ করলে সমস্যার সমাধান হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ছেলেরা যেভাবে লেখাপড়া করে, পাস করে একটি শুদ্ধ বাংলা লিখতে পারে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন জায়গায় চলে গেছে সে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমি কোনোমতেই আমার জাতির উন্নয়নে যে হিউম্যান রিসোর্স দরকার সেটা তৈরি করতে পারিনি। এখন পরিবর্তনের যে ধারা সৃষ্টি হয়েছে সে পরিবর্তন যদি করতে না পারি জাতি চরমভাবে হতাশ হবে। আগে শিল্প কারখানা সব জাতীয়করণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা আবার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে হয়েছে। আমরা অনেকেই মনে করি, এটা কেরানি চাকরির মতো। যারা একটি চাকরির জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে কয়েক লাখ টাকা উঠিয়ে দিয়েছেন, এটা কি ঠিক হলো? এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে অনেক দেরি করেছি।
শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোটের মহাসচিব চৌধুরী মুগীসউদ্দীন মাহমুদ, অতিরিক্ত মহাসচিব মো. জাকির হোসেন, অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, অধ্যাপক আবু সাঈদ সভা পরিচালনা করেন।
সমাবেশে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে চাকরি জাতীয়করণের ঘোষনা না এলে আগামী ২০ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লক্ষাধিক শিক্ষকের সমাবেশ করার ঘোষণা দেন।
(ঢাকাটাইমস/৫অক্টোবর/এলএম/এফএ)