যে কারণে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমি ছেড়ে যেতে চায় না

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:৩৬| আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:৪২
অ- অ+

ইসরায়েলি বাহিনীর কয়েক যুগ ধরে চলে আসা অমানবিক অত্যাচার, নির্যাতন, গণহত্যার পরেও ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজ ভূখণ্ডে টিকে থাকার লড়াই অব্যাহত রেখেছে। তারা অত্যন্ত সাহসিকতা নিয়ে গত ৭ দশক ধরে ইসরাইলি আগ্রাসন প্রতিহত করে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

গত এক বছরেই ইসরায়েলি সহিংসতায় সরকারি হিসাব মতে প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি গণহত্যার শিকার হয়। প্রকৃত হিসাবে, গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এককভাবে পশ্চিম তীরেই প্রায় ৭৪০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়।

গত সেপ্টেম্বর মাসে ইসরায়েলি ঔপনিবেশিক শাসন এদের সহিংসতা লেবানন পর্যন্ত বিস্তার করে এবং ২৩ সেপ্টেম্বরের আক্রমণে প্রায় ৫০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। লেবাননে দুই সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় ২ হাজার সাধারণ মানুষকে গণহত্যা করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকাজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে— রাস্তাগুলো বুলডোজার দিয়ে খনন করে নষ্ট করেছে, প্রাতিষ্ঠানিক ভবনগুলো বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভেঙে ফেলেছে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, সুপেয় ও প্রয়োজনীয় পানি সংকট তৈরি করা হয়েছে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বন্ধ করা হয়েছে। সর্বোপরি ইসরায়েলি প্রশাসন গাজায় জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় সকল ধরনের জিনিসপত্র ধ্বংস করে ফেলেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে এত কিছুর পরও ফিলিস্তিনিরা কেন তাদের ভূখণ্ড ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে না? এটা কী শুধুই ইসলাম ধর্মের পবিত্রতা রক্ষায় টিকে থাকার লড়াই অথবা বিশ্বের মানচিত্রে নিজেদের ভূখণ্ড বাঁচিয়ে রাখার লড়াই?

ফিলিস্তিনিদের কাছে এটা শুধুই ভূখণ্ড বা সম্পত্তি রক্ষার লড়াই নয়, বরং এটি তাদের কাছে ইতিহাস ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার লড়াই। তাদের এই সংগ্রাম ইসলাম ধর্মের পবিত্রতা রক্ষায় হলেও দীর্ঘ যুগের সামষ্টিক সংগ্রামের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতেও তারা জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে। ইহুদিদের চলমান আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে গেছে, তবুও তারা এই অঞ্চল ছেড়ে যেতে চায় না।

কৃষিভিত্তিক সমাজ হিসেবে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সংস্কৃতিতে শান্তির সুনাম ধরে রেখেছে। জলপাই গাছ তাদের শান্তির প্রতীক। জলপাই গাছ অনেক প্রাচীন উদ্ভিদ এবং এটির শাখা-প্রশাখা জমিতে অনেক বিস্তৃত থাকে। এজন্যই তারা জলপাই গাছ ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডজুড়ে রোপণ করে এবং জলপাই গাছের তেল উৎপাদন করে। ফিলিস্তিনি জনগণ জলপাই গাছের তেল ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে বিতরণ করে, যা তাদের সংস্কৃতির অন্যতম বহিঃপ্রকাশ।

যার ফলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জলপাই গাছগুলোতে বেশি আক্রমণ করে। এমনকি তারা একজন ফিলিস্তিনের জীবন ধ্বংস করার চেয়ে একটি জলপাই গাছ নষ্ট করে ফেলতে পারলে বেশি খুশি হয়।

এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ১৯৬৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় ৮ লাখ জলপাই গাছ উপড়ে ফেলেছে। এর মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনের সংস্কৃতি ধ্বংস করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্ষম হচ্ছে। ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করার যে দীর্ঘ পরিকল্পনা ইসরায়েলি প্রশাসনের রয়েছে, তা সংস্কৃতি ধ্বংসের মাধ্যমেও বাস্তবায়িত হচ্ছে।

ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের আক্রমণের গত এক বছরে ইসরায়েল জেনিন থেকে গাজার পুরো অঞ্চল জনমানব শূন্য করে ফেলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা তাদের আক্রমণ লেবানন পর্যন্ত বিস্তার করে। এরপরও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইরানের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ পাল্টা আক্রমণ করে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ভীতির সঞ্চার করেছে। এক্ষেত্রে ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণ হামাস ও হিজবুল্লাহর প্রতি তাদের অগাধ সমর্থন বজায় রেখেছে। পাশাপাশি তারা এই ভূখণ্ড ছেড়ে না যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে নিজেদের সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

ফিলিস্তিনিদের কাছে ‘আমরাই আমাদের ভূমি’, এটা শুধু রূপক বা কাব্যিক নয়। বরং এটি তাদের কাছে একটি জীবন্ত বাস্তবতা। যখন একজন ফিলিস্তিনিকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘তোমরা চলে যাচ্ছ না কেন?’, তারা উত্তর দেয়, ‘কেন আমরা যাব?’। এটি আমাদের ভূমি, এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ফিলিস্তিনিদের রক্ত ও অশ্রুতে টিকে আছে। এখান থেকে সরে যাওয়ার অর্থ হবে ফিলিস্তিনিদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ইসলামের মাহাত্ম্য মুছে ফেলার অনুমতি দেওয়া।

জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে না পারলেও ফিলিস্তিনিরা তাদের সংস্কৃতি ও ইসলামি শক্তি স্বগৌরবে টিকিয়ে রাখতেই এই ভূখণ্ড ছেড়ে যেতে চায় না। তারা ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হলেও, স্থানান্তরিত হয়ে পুনরায় চাষাবাদ করে জলপাই গাছের মাধ্যমে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ফিলিস্তিনিরা তাদের সংস্কৃতির মাধ্যমে বিশ্বের শান্তির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।

[আল জাজিরায় প্রকাশিত ফিলিস্তিনি-আমেরিকান আহমেদ ইবসাইসের নিবন্ধ। অনুবাদ: আব্দুল্লাহ কাফী]

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পবিপ্রবির বঙ্গবন্ধু হলের নামফলক ভেঙে নতুন নাম দিলেন শিক্ষার্থীরা
নওগাঁয় লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা
দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুর পাসপোর্ট কিনেছেন লোটাস কামাল!
প্রোটিয়া সফরের কয়েক ঘণ্টা আগে পাকিস্তানের কোচের পদ ছাড়লেন গিলেস্পি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা