ফ্ল্যাট নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দীপ্ত টিভির কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যা, ৩ জন আটক

প্রকাশ | ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:০৮ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

ফ্ল্যাট নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে রাজধানীর হাতিরঝিলে দীপ্ত টিভির সম্প্রচার বিভাগের এক কর্মকর্তা খুন হয়েছেন। হাতিরঝিল থানার মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় ঘরে ঢুকে তাকে হত্যা করা হয়। তার নাম তানজিল জাহান ইসলাম তামিম (৩২)। এ ঘটনায় তামিমের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মহানগর প্রজেক্টের চার নম্বর রোডের ডি-ব্লকের বাড়ির অষ্টম তলার একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় তামিমকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিজেদের জমিতে নির্মিত অ্যাপার্টমেন্টে ফ্ল্যাট পাওয়া নিয়ে প্লেসান্ট প্রোপার্টিজ নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানি ও তামিমদের মধ্যে বিরোধ চলছিল।

তামিমের বাবার অভিযোগ, প্লেসান্ট প্রোপার্টিজের কর্ণধার শেখ রবিউল আলম রবির নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

জানা যায়, তিনজন জমির মালিকের জমি নিয়ে ভবন নির্মাণ করে প্লেসান্ট প্রপার্টিজ। নয়তলা ভবনের ২৭টি ফ্ল্যাটের মধ্যে প্রত্যেক জমির মালিক পেয়েছেন সাড়ে চারটি করে।

তামিমের বাবা বলেন, অন্য দুই মালিকের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিলেও তার ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে গড়িমসি করে প্লেসান্ট প্রপার্টিজ। দীর্ঘদিন নানা চেষ্টার পরে দুটি ফ্ল্যাট বুঝে পেলেও এখনো বাকি ফ্ল্যাট বুঝে পাননি তারা। এদিকে ডেভেলপার কোম্পানির দখলে থাকা ফ্ল্যাটে নির্মাণকাজ শুরু করে কোম্পানির কর্মচারীরা। তাতে বাধা দিতে যান সুলতান ও তার ছেলে তানজিল। কাজে বাধা দেওয়ায় ডেভেলপার কোম্পানির লোকজন তানজিলের ওপর হামলা চালায়। এতে তানজিলসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরবর্তীতে তানজিলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

তামিমের বাবা সুলতান আরও বলেন, ‘ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে ফ্ল্যাট দখলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মামুনও জড়িত। তারা সন্ত্রাসীদের দিয়ে ফ্লাট ও জমির মালিকদের জিম্মি করে জোরপূর্বক ফ্ল্যাট দখল করে। ডিবির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুনের শ্বশুর সোলাইমান। এই সোলাইমান মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে চাকরি করতেন। তার সহযোগিতায় মামুন বিভিন্ন সময়ে আমার কাজ বন্ধ রেখেছে। অথচ অপর দুই জমির মালিকের ফ্ল্যাট ২০২২ সালের জুন মাসেই বুঝিয়ে দিয়েছে।’

পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করে সুলতান বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ আমাদের জিডিও নিত না। এমনকি পরশু রাতেও হামলার আশঙ্কায় থানায় গিয়েছি। থানার ওসি আমার অভিযোগ রাখেনি। বলেছে হামলা হলে তাদের জানাতে। আজ হামলার কথা জানালে ঘটনার প্রায় ২০ মিনিট পর পুলিশ পাঠিয়েছে। পুলিশ গিয়ে ডেভেলপার কোম্পানির লোকদের সঙ্গে কথা বলে। তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমার ছেলেকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিতে চাইলে সেখানেও তারা দেরি করায়। হামলাকারীরা আমার ছেলের গলা চেপে ধরেছে। বুকে আঘাত করেছে।’

লোকজন দিয়ে হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্লেসান্ট প্রপার্টিজের মালিক ও বিএনপির নেতা রবিউল আলম বলেন, ‘আমি কোনো লোকজন পাঠাইনি। তারা অন্যায়ভাবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফ্ল্যাটে কাজ করছিল। আমার একজন ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়েছিলাম তাদের কাজ বন্ধ করতে বলার জন্য। ওখানে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।’

নিহতের বাবার ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে রবিউল আলম বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারো কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমি তিন-চার বছর আগে ভবনের কাজ শেষ করে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। মূলত এই ভবনের জমির তিনজন মালিক প্রত্যেকে সাড়ে চারটি করে ফ্ল্যাট পেয়েছেন। দুজন মালিক অর্ধেক অংশ কিনে নিয়েছেন। কিন্তু সুলতান সাহেব ফ্ল্যাটের অর্ধেক অংশ অর্থাৎ সাড়ে ছয় শ বর্গফুট ফ্ল্যাটটি কেনার কথা বললেও কিনছেন না। বরং তিনি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করছেন। তাই আমরা আদালত থেকে একটা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। সেই নির্দেশনা অমান্য করে তিনি কয়েক দিন ধরে কাজ করছিলেন। এটা বন্ধ করতেই আমার লোকজন সেখানে গিয়েছিল। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। আশা করি ময়না তদন্তে সব প্রমাণিত হবে।’

রবিউল আরও বলেন, ‘সুলতান সাহেব ফ্ল্যাটটি কিনে সমস্যা সমাধান না করে ডিবির হারুনের শ্বশুরের সহযোগিতায় আমাকে চাপে রাখেন। হারুনের শ্বশুর মহানগর হাউজিংয়ের কমিটির সভাপতি ছিলেন। তার প্রভাবে সুলতান সাহেব আমাকে নানাভাবে হয়রানি করেন। আমি তাদের দ্বারা ভুক্তভোগী।’

ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে মিলে ফ্ল্যাট দখল ও গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মামুন বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণীতভাবে আমাকে চাপে ফেলা হচ্ছে। আমি এই ভবনের মালিক কিংবা ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে জড়িত না। ভবনে আমার শ্বশুর একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। আমি শ্বশুরের বাসায় থাকি। আজকের ঘটনার সময়ে আমি বাসায় ছিলাম না। কী হয়েছে আমার জানা নেই। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুলতান সাহেব লোকজন নিয়ে আমার বাসায় ভাঙচুর চালিয়েছেন। আমার বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছেন। বাসার আসবাবপত্র ভেঙে ফেলেছেন। এমনকি তারা সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে নিয়ে গেছে।’

পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এমনকি হামলার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। যারা জড়িত তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।’

তানজিলের ওপর কারা হামলা করেছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘প্লেসান্ট প্রপার্টিজ লিমিটেড কোম্পানির লোকজন হামলা করেছে। আমরা তাদের সাইট ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজনকে আটক করেছি। প্লেসান্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১০অক্টোবর/এলএম/এসআইএস)