পূজার ছুটিতে কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকের ঢল
পর্যটক খরায় ভুগতে থাকা কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা বয়সী পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে।
শারদীয় দুর্গাপূজা আর সাপ্তাহিক বন্ধকে সামনে রেখে চারদিনের সরকারি ছুটিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে সাগরকন্যা কুয়াকাটায়।
দীর্ঘ এক মাস পর খাবার হোটেল, ঝিনুক-শামুক, আচার, শুটকি, ফিস ফ্রাই সহ পর্যটন নির্ভর পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেচাকেনা বেড়েছে। সুদিন দেখছেন তারা। তবে অতিরিক্ত পর্যটক দর্শনার্থীদের ভিড়কে পুঁজি করে অতিরিক্ত রুম ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আগতদের।
তবে অগোছালো সৈকত দেখে হতাশ আগত পর্যটকরা। তারা বলছে এত সুন্দর সৈকতের এমন বিশ্রী অবস্থা! যত্রতত্র পড়ে আছে জিও টিউব আর জিও ব্যাগ। এসবে নির্বিঘ্নে উপভোগ করা যায় না আসল সৌন্দর্য।
আবার সৈকতে পর্যটকদের মধ্য দিয়ে চলাফেরা করছে মোটরসাইকেল সহ অটোভ্যান। যা শিশুসহ সব বয়সী পর্যটকদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ।
অপরদিকে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের গাড়ি রেখে সৈকতের প্রধান প্রবেশ পথকে আটকে রাখায় ভোগান্তির শিকার হয় পর্যটকরা এমন মন্তব্য পর্যটকদের।সরেজমিনে দেখা যায়, কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে আশেপাশের ২ কিলোমিটার সৈকত জুড়ে পর্যটকদের হৈ-হুল্লোড়। সমুদ্রের বুকে কেউ কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কেউ বা আবার দলবেঁধে সাতার কাটছে। আনন্দ উপভোগের দৃশ্য স্মৃতিপটে ধারণের জন্য কেউ বা আবার মোবাইলে অথবা ফটোগ্রাফার দ্বারা ছবি তুলে রাখছে। তবে শিশুদের আনন্দ উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। নানা বয়সী পর্যটকরা ঘোড়ার পিঠে চড়ছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেকেই সৈকতের ছাতা বেঞ্চিতে শুয়ে-বসে উপভোগ করেছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
খুলনা থেকে ভ্রমণে আসা তরুণী ছোঁয়া বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষা শেষে পরিবারের সাথে এই প্রথম ভ্রমণে এসেছেন। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের উপভোগ সহ দর্শনীয় স্পটগুলো ঘুরে বেড়িয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের এত সুন্দর একটি সমুদ্র সৈকত স্ব-চক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে।’
সৈকত লাগোয়া চা বিক্রেতা মো. সোহেল বলেন, ‘গতকাল থেকে চোখে পড়ার মত পর্যটক কুয়াকাটায় আসছে। বেঁচা-বিক্রি বাড়তে শুরু করছে। আশা করি ঘাটতি পুষিয়ে উঠতে পারব।’
ক্যামেরাম্যান আল-আমীন বলেন, ‘গতকাল থেকেই মোটামুটি পর্যটক আসতে শুরু হয়েছে। আজ ভালোই পর্যটক বাড়ছে। আমরা আমাদের সংকট কাটাতে পারবো।’
খাবার হোটেল সংগঠনের সভাপতি মো. সেলিম মুন্সী বলেন, ‘বিগত দিনে বেচা কিনা খুবই খারাপ ছিল। গতকাল থেকে ভালোই বিক্রি হচ্ছে। এখন আমাদের দুশ্চিন্তা কাটবে।’
আবাসিক হোটেল বেস্ট সাউদার্নের জেনারেল ম্যানেজার আবুল কালাম বলেন, ‘টানা ছুটিতে আমাদের আবাসিক হোটেল শতভাগ রিজার্ভেশন রয়েছে। অনেকদিন পরেই এমন পর্যটক আসল কুয়াকাটায়। আমরা পর্যটকদের চাহিদাকে সব সময়ই প্রায়োরিটি দিই।’
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ মোতালেব শরীফের বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকলে সারাবছর পর্যটকদের আনাগোনা থাকে কুয়াকাটায়। আগত পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে।’
অতিরিক্ত রুম ভাড়া আদায়ের বিষয় তিনি দাবি করেন, তাদের অ্যাসোসিয়েশন ভূক্ত হোটেল মোটেল রিসোর্টগুলোতে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত নেওয়া হয় না। নিম্নমানের আবাসিক হোটেলগুলোতে ভাড়ার হেরফের হতে পারে। এ বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. আনসার উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণভাবে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। সৈকত সহ দর্শনীয় স্পটগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দিচ্ছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এখানে নিয়মিত তদারকি করছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশে চলমান অস্থিরতা কেটে যাওয়ার ফলে পর্যটক বাড়ছে কুয়াকাটায়। তাদের নিরাপদ ও ভ্রমণে যা যা করা দরকার তা সবই করা হবে। আমরা পর্যটকদের অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিবো এবং সৈকতের মূল কেন্দ্রে যত্রতত্র যানবাহন চলাচলের উপর আরো কঠোর ভূমিকা নেওয়া হবে।’
(ঢাকা টাইমস/১১অক্টোবর/এসএ)