নিষিদ্ধ রাজনীতি প্রকাশ্যে চলছে হাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে!
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পরও প্রকাশ্যে দলীয় ব্যানারে রাজনীতি চলছে। এমনই অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
সম্প্রতি ধানের শীষ, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার ছবিসংবলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী কর্মচারী পরিষদের অনুমোদিত কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেই তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরেও পাঠানো হয় বলে খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া গত ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের পঞ্চম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ব্যানারে মৌন মিছিল ও স্মরণ সভা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের পরে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। তারা চান না ক্যাম্পাসে আবার নতুন মোড়কে পুরনো রাজনীতি ফিরে আসুক। একদল চলে গেছে, এখন আরেক দল এসে আগের মতো রাজনীতি জাঁকিয়ে বসবে, এটা তারা মেনে নেবেন না। যারা কমিটি দিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. শামসুজ্জোহা বলেন, ‘গত ১১ আগস্টের পর থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রদের রাজনীতি বন্ধের আদেশ এখনো বহাল আছে। তাই ছাত্রদল ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করতে অনুমতি চাইলে তাদের তা করতে দেওয়া হয়নি। ওরা রাজি হয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে মৌন মিছিল করে।’
দলীয় ব্যানারে রাজনীতি চালিয়ে গেলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘আইন অনুযায়ী ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ। দলীয় ব্যানারে কোনো তালিকা হয়ে থাকলে এ ব্যাপারে প্রশাসন ও ভিসি মহোদয় ব্যবস্থা নেবেন।’
ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ এমন কিছু তারা জানতেন না বলে দাবি করেন জাতীয়তাবাদী কর্মচারী পরিষদের সভাপতি মো. নুর জামান। সম্প্রতি অনলাইনে প্রকাশিত তাদের কমিটি গঠন ও অনুমোদিত কমিটির অনুলিপি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই কমিটি বছর দুয়েক আগে করা। কিন্তু বিগত সরকারর ভয়ে আমরা তা প্রকাশ করতে পারিনি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত থাকায় আমরা অনুমোদিত কমিটির অনুলিপি প্রকাশ করি। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে থাকলে আমরা রাজনৈতিক কোনো কমিটি রাখব না।’
সাবেক আওয়ামী লীগের সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সারা দেশের মতো হাবিপ্রবিতেও সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে গত ১১ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত রাজনীতি নিষিদ্ধের অফিস আদেশে আরো বলা হয়, আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।
এছাড়া হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ অনুযায়ী চাকরির শর্তাবলির ৪৭ নম্বর ধারার ৫ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তার রাজনৈতিক মতামত পোষণের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন না করে তার চাকরির শর্তাবলি নির্ধারণ করতে হবে। তবে তিনি তার উক্ত মতামত প্রচার করতে পারবেন না বা তিনি নিজেকে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত করতে পারবেন না৷
(ঢাকাটাইমস/১১অক্টোবর/মোআ)