হারলেও বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল ফারুক খানকে?
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান নিজ নির্বাচনি এলাকা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর-কাশিয়ানিতে ব্যাপক অজনপ্রিয় ছিলেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয় সেই নির্বাচনেও ফারুক খানকে কার্যত জোর করে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল।
ঢাকা টাইমস খোঁজ নিয়ে জেনেছে, প্রকৃতপক্ষে সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাবির মিয়া জয়ী হয়েছিলেন। ফারুক খান সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানের ভাই, তিনি নিজেও সামিট গ্রুপের অন্যতম পরিচালক। তার সঙ্গে শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়দের বিশেষ সম্পর্ক নিয়ে এলাকায় আলোচনা আছে। বিশেষ সুবিধা পেয়ে ফারুক খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় এবং পরবর্তীতে মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়া হয়। ফারুক খানকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী করা হয়।
ঢাকা টাইমসের গোপালগঞ্জ এবং কাশিয়ানি-মুকসুদপুর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ফারুক খানের মেয়ে কান্তারা খান মুকসুদপুর-কাশিয়ানি এলাকায় রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিনি প্রভাব বিস্তার করতেন এমনকি আওয়ামী লীগের যে মনোনয়ন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই মনোনয়ন প্রভাব বিস্তার করতে টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে কান্তা খানের নাম বারবার জড়িয়েছে।
কাশিয়ানি সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একবার ফারুক খান ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে, রীতিমতো ভোট ডাকাতি করে জনৈক মশিউর রহমানকে বিজয়ী করেন। যার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এভাবে কান্তা খানের নেতৃত্বে ওই এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
এই ধরনের অজনপ্রিয় লোককে দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়, কেন ফারুক খানদের মতো অরাজনৈতিকরা রাজনীতিতে প্রাধান্য পান এই প্রশ্ন কিন্তু খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরই। ফারুক খান গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাকে যৌথ বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে। ঢাকা টাইমসের কাছে তথ্য আছে তাকে সামরিক হাসপাতালেও নেওয়া হয়েছিল।
এই ধরনের নেতাদেরকে মন্ত্রী করার মাধ্যমে শেখ হাসিনা আসলে কি বার্তা দিয়েছেন দেশের মানুষকে এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে দিতে চেয়েছিলেন সেটি আসলে কারোরই বোধগম্য নয়। এর আগেও ফারুক খান মন্ত্রী ছিলেন। তাকে বাণিজ্যমন্ত্রীও করা হয়েছিল। এজন্য তিনি কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়েছিলেন। বিভিন্ন সভায় ব্যবসায়ীদের ধমকানো চমকানো, এটি প্রায় নিয়মে পরিণত করেছিলেন। পরবর্তীতে তাকে অবশ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এরপর মাঝখানে তিনি মন্ত্রী হননি। শেখ হাসিনার শাসনামলে ফারুক খান মন্ত্রী হয়েছেন দু'দফায়। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং পরে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণ প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের যে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড তারও সদস্য ছিলেন। ফারুক খানের ভাই আজিজ খান দেশের অন্যতম বিতর্কিত সামিট গ্রুপের কর্ণধার। এই সামিট গ্রুপ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম মাফিয়া। যাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের ব্যাপক অভিযোগ আছে। বাংলাদেশ থেকে কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত সিঙ্গাপুরে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ জন ব্যবসায়ীর একজন ফারুক খানের ভাই আজিজ খান।
এই ফারুক খানরাই মূলত আওয়ামী লীগের বোঝা, এমনই আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা মনে করেন। যে এই ধরনের ব্যক্তিদের প্রাধান্য দিতে গিয়ে, অতিমাত্রায় গুরুত্ব দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ডুবেছে। কেন ফারুক খানরা আওয়ামী লীগে এত বেশি গুরুত্ব পান? কেন তাদের ওপরেই নির্ভরতা বাড়ান শেখ হাসিনা? এই প্রশ্ন সকলের। কিন্তু যিনি উত্তর দেবেন, তিনি কি আসলে এ বিষয়ে মুখ খুলবেন? কথা বলবেন? আদৌ এই প্রশ্নের প্রকৃত জবাব পাওয়া যাবে? আমরা অপেক্ষায় রইলাম।
(ঢাকাটাইমস/১৫ অক্টোবর/এআরডি)