যানজটে দৈনিক নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা
ঢাকায় যানজটের কারণে দৈনিক নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা। অর্থমূল্যে যা দৈনিক প্রায় ১৩৯ কোটি এবং বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার অধিক।
যানজট নিরসন বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা এ তথ্য তুলে ধরেন। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সভাকক্ষে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট ‘যানজটের অভিশাপ থেকে পরিত্রাণে করণীয়’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
ঢাকা শহরের ট্রাফিক সিস্টেম অকার্যকর হওয়ার বিভিন্ন কারণ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আইনের প্রতি সম্মান ও বাধ্য না থাকা, চালকের নিয়মিত প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক না করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সয়ংক্রিয় সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বা কাস্টোমাইজেবল ইন্টেগ্রেটেড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইটিএমএস) প্রবর্তনের পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ১৮ দফা সুপারিশও উপস্থাপন করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বহুমাধ্যম ভিত্তিক সমন্বিত ও জনবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ এবং ট্রাফিক সিগনাল সিস্টেম গবেষক ও ট্রাফিক্সের সিইও আশরাফুল আলম রতন। সংস্থার কর্মসূচি প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান সঞ্চালনা করেন।
সাইফুদ্দিন আহমেদ তার প্রবন্ধে বলেন, ২০০৭ সালে ঢাকায় গাড়ির গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কি.মি.। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। ঢাকায় যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে দৈনিক প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা। অর্থমূল্যে যা দৈনিক প্রায় ১৩৯ কোটি এবং বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার অধিক। যানজটের এই সমস্যার জন্য শৃঙ্খলা না মেনে গাড়ি চালানো, রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ত সড়কে মেগা প্রকল্পগুলোর কালক্ষেপণ, ব্যক্তিগত গাড়ি নির্ভর পরিকল্পনা, দূর্বল ট্রাফিক সিগন্যাল ও মনিটরিং ব্যবস্থা, যানবাহন নিবন্ধনে অব্যবস্থাপনা, সার্বিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞানভিত্তিক ও আধুনিক পদ্ধতির অভাবসহ বেশ কিছু কারণ দায়ী। এ বিষয়গুলোর সুষ্ঠু সমাধান করা গেলে সড়কে ফিরতে পারে গতি ও শৃঙ্খলা।
আশরাফুল আলম রতন প্রবন্ধে বলেন, ঢাকা শহরের ট্রাফিক সিস্টেম অকার্যকর হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে হাত-লাঠি নির্ভর সিগনাল সিস্টেম, সিগনালে যানবাহনের পারাপারের মধ্যে বিশৃঙ্খলা, যানজট সৃষ্টি হতে পারে এমন স্থানে গাড়ি পার্কিং করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, আইনের প্রতি সম্মান ও বাধ্য না থাকা, চালকের নিয়মিত প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক না করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আমরা স্বনির্বাচনযোগ্য সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বা কাস্টোমাইজেবল ইন্টেগ্রেটেড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইটিএমএস) প্রস্তাব করছি।
বক্তারা বলেন, অপরিকল্পিত নগর পরিবহন ব্যবস্থার কারণে ঢাকা শহর পরিণত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম যানজট প্রবণ নগরে। ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২৩-২৫ কোটিতে পৌঁছাবে এবং এ জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি বড় অংশ ঘটবে শহরাঞ্চলে। এখনই যানজট হ্রাসে উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
তারা আরও বলেন, আমাদের প্রত্যাশা গণপরিবহন তথা বাস, রেল ও নৌপথে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে একটি বহুমাধ্যমভিত্তিক সমন্বিত ও জনবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
আয়োজনে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান, আইনজীবি ও নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার আমিনুল ইসলাম সুজন, সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ এর নির্বাহী সদস্য মারুফ হোসেন, মাদক বিরোধী সংগঠন ‘প্রত্যাশা’সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনের পূর্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দাবিতে একটি অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৬অক্টোবর/ইএস)