১০ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা পদে ফিরতে চান, আইনী প্রক্রিয়ায় যাওয়ার পরামর্শ
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বাদে দেশের দশ সিটিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী কাউন্সিলররা। তবে পুনর্বহালের জন্য আইনী প্রক্রিয়ায় যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের অধিকার আদায়ে দুইটি প্রক্রিয়ায় যেতে হবে৷ একটি হচ্ছে কাউন্সিলরদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নাই। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারলে কাউন্সিলররা হারানো গৌরব ফিরে পাবে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু কাউন্সিলরদের অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন হয়ে গেছে, তাই আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়াম হলরুমে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন বাদে জনগনের স্বার্থে ফ্যাসিবাদ বিরোধী কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের দাবিতে কাউন্সিলর সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সিটি কর্পোরেশন কেন্দ্রীয় কাউন্সিলর্স এসোসিয়েশনের ব্যানারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রায় তিনশো কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার মামুন বলেন, কাউন্সিলররা হচ্ছে স্থানীয় সরকারের একমাত্র প্রতিনিধি। স্থানীয়ভাবে জনগণকে সেবা দিলেও এমপির সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। স্থানীয় সরকারের শাসন বিভাগের একমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি হচ্ছে কাউন্সিলররা। তাদের পরিচয় তারা নিজেরা তৈরি করতে পারে নাই। ফলে কাউন্সিলররা পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছে। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে নাই বলে বিভিন্ন সরকার তাদের তাচ্ছিল্য করছে। দেশের স্থানীয় সরকার যত শক্তিশালী, সেই দেশ তত উন্নত। তাই বিদেশীরা আসলে তারা সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদের কাজ দেখতে যায়।
তিনি বলেন, সচিব, এমপি, মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির চারিত্রিক সনদ ইস্যু করে কাউন্সিলররা। তাছাড়া জন্ম, মৃত্যুসহ সকল নিবন্ধন কাউন্সিলর কাছ থেকে নিতে হয়। তাই কাউন্সিলররা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তাদের বুঝতে হবে এমপি তাদের বড় ভাই না। জনগণকে বুঝাতে হবে সংসদ সদস্য আর কাউন্সিলর এক নয়। এই বিষয়গুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি কাউন্সিলরদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহাসমাবেশ করে সরকারকে বুঝিয়ে দিতে হবে, আপনাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা কি? এভাবে করতে পারলে আপনারা কামিয়াব হবেন।
অনুষ্ঠানে দশটি সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। তারা বলেন, আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করি। তাদের সুখে-দুঃখের ভাগিদার। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কথা বলতে এসেছি। কাউন্সিলর না থাকায় সেবা পাচ্ছে না স্থানীয় জনগণ। তারা আমাদের কাছে এসে তাদের ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন। কাউন্সিলররা একজন নাগরিকের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সেবা দিয়ে থাকেন। সনদ দেওয়ার বাহিরেও আমরা বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ব পালন করে থাকি। কাউন্সিলরদের পকেটে সিল নিয়ে ঘুরাতে হয়। যখন-তখন সনদের স্বাক্ষর ও ছিল দিতে হয়। আজকে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তারা সরকারি কর্মকর্তা। তারা দুই দিন থাকে ছুটিতে, আরেক দিন বিভিন্ন মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, জনগণ তাদের খুজে পায় না।
কাউন্সিলররা বলেন, এলাকায় এলাকায় ওয়ারিশ সদনসহ বিভিন্ন সনদের জন্য নাগরিকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেবা পাচ্ছে না৷ কাউন্সিলর না থাকলে নতুন বাংলাদেশের জনসেবায় বিঘ্নিত ঘটবে। এতে করে সরকারের বদনাম হবে, আমরা চাই এই সরকার সঙ্গে কাজ করতে। আমরা এই সরকারের ব্যর্থতা দেখতে চাই না। কাউন্সিলরদের বহাল করে জনগণের সেবা করার সুযোগ করে দিন।
তারা আরও বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর এলাকায় আমরা প্রসাশনের ভূমিকা পালন করেছি। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হতে দেইনি। তবুও বলা হয়েছে, আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করি নাই, কিন্তু আমরা ৫ আগস্টের আগে-পরে সার্বক্ষণিক এলাকায় ছিলাম, জনগণের সেবা দিয়েছি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আমাদের অংশগ্রহণ ছিলো, শিক্ষার্থীদের খাবার-পানি দেওয়াসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করেছি। এছাড়া করোনাকালেও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পাশে ছিলাম, মৃত্যু লাশ দাফন করা থেকে ত্রাণ দেওয়াসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাল করেছি।
কাউন্সিলররা বলেন, দল বিহীন, প্রতীকবিহীন, স্বতন্ত্র নির্বাচনে অংশগ্রহণে করে ভোটে পাশ করেছি। অনেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বৈষম্যের শিকার হয়েছি। যে সকল কাউন্সিলরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক। ঢালাওভাবে সবাইকে বাদ দেওয়া ঠিক হয়নি। যাচাই-বাছাই করে অপসারণ করা দরকার ছিলো। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছি, তাদের যেনো দ্রুত পনর্বহাল করা হয়। আমাদের অপসারণ করার পর থেকেই এলকায় চুরি-ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বেড়ে গেছে। আমরা আপনাদের লোক। আমাদের বাদ দিয়ে কোনো উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।
তারা আরও বলেন, সব সরকারই বলেছে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে হবে কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় সরকার দুর্বল হয়ে আছে। ইউনিয়ন পরিষদ বহাল রেখেছেন, যারা দলীয় প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করেছে তাদের বহাল রেখেছেন। আমাদের বাদ দিয়ে বৈষম্যের সৃষ্টি করেছেন। জনগণের পালস বুজেন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে জনগণকে মুক্তি দিন৷ দুর্ভোগ লাগব করুন। আমাদের পুনর্বহাল করুন।
নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা বক্তব্য দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত-আহতদের স্মরণ করেন বক্তারা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বাংলাদেশ সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোঃ নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী গোলাম কীবরিয়া সঞ্চালনায় সমাবেশ আরও বক্তৃতা করেন, যুক্ত ফোরামে সমন্বয়ক সরদার শামস আল মামুন (চাষী মামুন), নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মহিলা কাউন্সিলর মোসাম্মৎ আয়শা আক্তার দিনা প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/০৪নভেম্বর/আরএইচ/এমআর)
মন্তব্য করুন