সাতক্ষীরা-শ্যামনগর মহাসড়কের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে ১৫ লাখ মানুষ
সাতক্ষীরা-শ্যামনগর মহাসড়ক, যেটি সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। মহাসড়কটি এ অঞ্চলের পাঁচটি উপজেলার মানুষদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। কিন্তু গত দুই যুগেও সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে এটি ভগ্নদশায় রয়েছে। মহাসড়কটি দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও সংস্কারের অভাবে অন্তত ১৫ লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
জানা গেছে, মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের দৈনন্দিন যাতায়াত, কৃষিপণ্য পরিবহন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ ছয় জেলাজুড়েই সুন্দরবন বিস্তৃত। সাতক্ষীরা ছাড়া অন্য পাঁচ জেলা দিয়ে সুন্দরবনে যেতে নদীপথে প্রবেশ করতে হয়। একমাত্র সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ থেকে সরাসরি সড়কপথে যাওয়া যায়। এজন্য জেলার ব্র্যান্ডিং ‘সাতক্ষীরার আকর্ষণ, সড়কপথে সুন্দরবন’। বর্তমানে সড়কটি ভাঙাচোরা হওয়ার কারণে পর্যটকরা আসতে আগ্রহী হচ্ছেন না, যা স্থানীয় অর্থনীতির জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সড়কটি সংস্কার না করে এভাবে চলতে থাকলে সংকটে পড়বে তাদের জীবন-জীবিকা।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা-শ্যামনগর মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার। সড়কটি সর্বশেষ সংস্কার করা হয় ১৯৯৮ সালে। এর পর গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি চলাচল উপযোগী রাখতে ১৬ স্থানে হেরিং বন্ড (ইটের সোলিং) করা হয়েছে। এছাড়াও সড়কটি মাঝে মধ্যে নিজ উদ্যোগে পুডিং করে মেরামত করে সওজ। এবার পুডিংয়ের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৯০ লাখ টাকা।
নিজের বিরক্তি ঝেড়ে প্রতিদিন সড়কটি ধরে চলাচলকারী ইজিবাইক চালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘গর্ভবতী নারীরা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য জেলা শহরে যেতে গিয়ে চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। রাস্তা খারাপ অবস্থা তাদের জন্য ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে যেমন দীর্ঘ সময় ধরে যাতায়াত করতে হচ্ছে, অন্যদিকে সড়কের অসংখ্য গর্ত ও পাথরের কারণে তাদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তা করতে হচ্ছে। অনেক সময় রাস্তাটি অতিক্রম করতে গিয়ে তারা শারীরিকভাবে অসুস্থও হয়ে পড়েন।’
স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, সড়কের দুরবস্থার কারণে গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসা পেতে দেরি হচ্ছে, যা তাদের এবং শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অনেক সময় জরুরি পরিস্থিতিতে হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য সময়মতো যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্যদিকে পর্যটন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় নীলডুমুর ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল হালিম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি এই অঞ্চলে পর্যটন ব্যবসায় জড়িত। ২০১৬ সালে পর্যটন বর্ষ ঘোষণার পর পর্যটকদের প্রচুর চাপ ছিল। এখন সাতক্ষীরা রেঞ্জে পর্যটক অনেক কমে গেছে। পর্যটক কমার কারণ সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মোংলা বা পূর্ব সুন্দরবনে সহজেই প্রবশ করতে পারেন পর্যটকরা। কিন্তু সেই তুলনায় এই পথে অনেক সময় লাগে। বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী-এমপিরা সড়ক মেরামতের আশ্বাস দিলেও সংস্কার হয়নি। এসব কারণে পর্যটক কমেছে।’
সাংবাদিক তানজির কচি বলেন, ‘সাতক্ষীরা-শ্যামনগর ৫৫ কিলোমিটার সড়কটি প্রায় ১২ বছর সংস্কার করা হয়নি। যার ফলে সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর এবং আশাশুনির আংশিক অংশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। বাংলাদেশে কোথাও আমরা দেখিনি পাকা রাস্তার ওপর ইটের সোলিং দিয়ে রাস্তা সংস্কার করা হয়। সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত এই ৫৫ কিলোমিটার মধ্যে ১৬ জায়গায় ইটের সোলিং দিয়ে কোনো রকমে চলাচল উপযোগী করা হয়েছে। এরকম ভয়ানক অবস্থা বাংলাদেশের কোথাও নেই, বিগত সময় যারা ক্ষমতায় ছিল তারাও দেখভাল করেনি, বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে তারাও করবে কি না জানি না।’
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘সাতক্ষীরা থেকে কালিগঞ্জ পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার চারলেন ও কালিগঞ্জ থেকে ভেটখালী পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার ২৪ ফুট প্রস্থ রেখে ২০২৩ সালে একটি প্রকল্পের খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ৮২২ কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়ে প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। গত দুই মাস মন্ত্রণালয়ে এই কাজের দরপত্রগুলো অনুমোদনের জন্য রয়েছে। দ্রুত যদি অনুমোদন না হয় আর ঠিকাদার না আসে, তবে আমাদের পক্ষে এই সড়ক আর মেরামত করে রাখা সম্ভব হবে না।’(ঢাকা টাইমস/০৯নভেম্বর/এসএ)
মন্তব্য করুন