আ.লীগের কর্মসূচি: পূর্ণ শক্তি নিয়ে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মাঠে নামলেই দাঁত ভাঙা জবাব
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ রাজধানীর গুলিস্তানে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণার পর কঠোর ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীজুড়ে এরইমধ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি মাঠে বাড়ানো হয়েছে র্যাব-পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য। বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছে, কথিত কর্মসূচি ঘিরে কোনো ধরনের নাশকতা করলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। পাশাপাশি কর্মসূচি পালনে কেউ রাজধানীতে এলে তাদের প্রতিহত করা হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অন্তর্বর্তী সরকার। বলা হচ্ছে, ফ্যাসিবাদী দলকে কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আগামীকাল রবিবার বেলা ৩টায় গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে’ বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা আটটার দিকে আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘সেনাবাহিনী ও পুলিশ কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করবে না, আন্তর্জাতিকভাবে তারা এমনিতেই অনেক চাপে আছে। সবাই নির্ভয়ে আসুন।’ ওই পোস্টে আরও বলা হয়েছে, কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন, রাজধানীবাসীর শান্তি-শৃঙ্খলা কেউ যাতে নষ্ট করতে না পারে এজন্য আমরা সক্রিয় রয়েছি। যে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে তা পালনে ডিএমপির কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। ফলে অনুমতি ছাড়া কাউকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘এরপরেও কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে কঠোরভাবে তাদের দমন করা হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে পর্যাপ্ত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যানচলাচল স্বাভাবিক রাখা এবং অফিস-আদালত চালু রাখাসহ নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে আগামীকাল (রবিবার) কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ডিবি ছাড়াও ডিএমপির সবগুলো ইউনিট সক্রিয় অবস্থায় মাঠে থাকবে বলে জানান পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, যেকোনো ধরনের জনসমাগম ঠেকাতে বিভিন্ন পাড়া-মল্লায় অভিযান চালানো হচ্ছে। হোটেল ও ছাত্রাবাসগুলোতে বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। তাছাড়া ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে অতিরিক্ত সতর্ক রয়েছে পুলিশ। রাত থেকে যাত্রীবাহী গণপরিবহনে তল্লাশি চালানো হবে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হবে। তাছাড়া রাজধানীর বেশকিছু জায়গায় লাঠি নিয়ে মিছিল করতে দেখা গেছে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের। তারা বলছে, কোনোভাবে আগামীকাল আওয়ামী লীগকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। রাস্তায় পেলেই তাদেরকে প্রতিহত করা হবে। তাছাড়া সেনাবাহিনীর টহল টিম রাজধানীতে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'কালকের ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলছে। ঢাকামুখী প্রবেশ পয়েন্টে র্যাবের চেকপোস্ট থাকবে। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জায়গায় র্যাব মোতায়েন থাকবে। ঢাকার সবগুলো ব্যাটালিয়নে অতিরিক্ত ফোর্স থাকবে। কেউ যদি কোনো ধরনের নাশকতা করার চেষ্টা করে র্যাব তাদের গ্রেপ্তার করবে।'
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, কর্মসূচি পালনে আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অনুমতি চায়নি। অনুমতির বাইরে বেআইনিভাবে সমাবেশ করলে পুলিশ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।'
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এবারই প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হলো। দলটির কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সকল নেতারাই প্রায় আত্মগোপনে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হয়েছে হত্যাসহ বহু মামলা। এরমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন অনেক নেতা। মাঝেমধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতে ফোনালাপ করেন, যা প্রায় ভাইরাল হয়। এসব কথোপকথনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আগ্রাসী মনোভাবই লক্ষ্য করা যায়।
মাঠে থাকবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন:
আওয়ামী লীগের রবিবারের ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে নাশকতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছে বলে দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার। সংগঠনটি বলছে, নাশকতার পরিকল্পনা এবং মুজিববাদী স্বৈরাচারিদের রুখে দিতে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আগামীকাল সকাল ১১টায় প্রেসক্লাবে একত্রিত হয়ে সাড়ে ১১টার দিকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টের দিকে যাবে। এতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সহযোদ্ধাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, 'আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিবাদী দল। বাংলাদেশে কোনো প্রতিবাদ করার অনুমতি দেওয়া হবে না তাদের। যারা গণহত্যাকারী ও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নির্দেশে র্যালি, জমায়েত বা মিছিল করার চেষ্টা করবে, তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূর্ণ শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করবে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গ করার কোনো প্রচেষ্টাকে সহ্য করবে না।'
অন্যদিকে কর্মসূচি ঘিরে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে জনতার হাতে আটক হয়েছেন দলটির এক নেতা। প্রাথমিকভাবে আটক ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যায় তাকে আটক করেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। তবে তার সঙ্গে থাকা দুই ব্যক্তি পালিয়ে গেছেন।
(ঢাকাটাইমস/০৯নভেম্বর/এসএস/এমআর)
মন্তব্য করুন