শিক্ষার্থী ও বিএনপির দখলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও নূর হোসেন চত্বর
আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল প্রতিহত করতে গুলিস্তানের নূর হোসেন চত্বরে অবস্থান নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপি ও যুবদল-মহিলা দলসহ দলটির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিন বিকাল ৩টায় জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
রবিবার সকাল থেকেই নূর হোসেন চত্বর ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে তাদের অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তবে রাস্তায় যান চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে।
শহীদ নূর হোসেনের স্মরণে ও ‘অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ দাবিতে রবিবার বিকাল ৩টায় জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে দুপুর ১২টায় একই স্থানে গণজমায়েতের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৮টা থেকেই জিরো পয়েন্ট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছেন। তারা আওয়ামী লীগবিরোধী মিছিল করছেন। পাশাপাশি গণজমায়াতের জন্য তাদের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটের সামনে প্রধান সড়কের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করতে দেখা গেছে। এজন্য গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে স্টেডিয়ামমুখী রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শনিবার রাত থেকেই অবস্থান নিয়েছে বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। রবিবার সকালে সেখানে বিএনপি, যুবদল ও মহিলা দলের বিভিন্ন শাখা ও ইউনিটের নেতাকর্মীদের মিছিল ও অবস্থান করতে দেখা যায়। তাদেরও আওয়ামী লীগবিরোধী স্লোগান দিতে শোনা যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি জিরো পয়েন্টে একটি জলকামান এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে একটি জলকামান ও রায়ট কার দেখা গেছে। বিজিবি সদস্যদের গাড়ি নিয়ে পুরো এলাকা টহল দিতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে শনিবার রাত ও রবিবার সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক সন্দেহে কয়েকজনকে ধরে মারধর করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
পল্টন থানা সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতে সাতজন ও রবিবার সকালে ১০ জনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী নাছিরুল আমিন বলেন, “কিছু লোক আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছিল। ছাত্র-জনতা তাদের ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।”
এর আগে শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়, রবিবার শহীদ নূর হোসেনের স্মরণে ও ‘অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ দাবিতে জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করবে দলটি।
এর বিপরীতে শনিবার রাত ৮টার দিকে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনটি তাদের ফেসবুক পেজে জানায়, ‘পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে’ রবিবার দুপুর ১২টায় জিরো পয়েন্টে গণজমায়েত করবে তারা।
এদিকে আওয়ামী লীগকে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেওয়া হবে না বলে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে বলেন, “আওয়ামী লীগ বর্তমানে একটি ফ্যাসিবাদী দল। এই ফ্যাসিবাদী দলকে বাংলাদেশে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি করতে দেওয়ার সুযোগ নেই।”
তিনি আরও লেখেন, “আওয়ামী লীগ তার বর্তমান রূপে একটি ফ্যাসিবাদী দল। গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশ নিয়ে যে কেউ র্যালি, সমাবেশ ও মিছিল করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পূর্ণ শক্তির মুখোমুখি হবে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও এ বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘গণহত্যাকারী ও নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।”
(ঢাকাটাইমস/১০নভেম্বর/এলএম/এফএ)
মন্তব্য করুন