স্বেচ্ছায় সরে গেলে ক্ষমা পাবেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা
মুক্তিযুদ্ধ না করেও তালিকায় নাম তোলা হয়েছে, এমন কেউ স্বেচ্ছায় সরে গেলে তাদের ক্ষমা করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
বুধবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস পালন উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুক ই আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও অনেকে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। আমার দৃষ্টিতে এটা একটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা। এটা ছোটখাট অপরাধ নয়, অনেক বড় অপরাধ। তাদেরকে বাতিল করব এবং এটার জন্য সাজার ব্যবস্থা করব।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থায় যেতে পারব। তিনটা চারটা নীল তালিকা, লাল তালিকা, নানা রকমের তালিকা... ভারতীয় তালিকা এখানে আছে। অনুরাগের বশে বা আত্মীয়তার বশে বা অন্য কোনো প্রলোভনে এখানে বহু মানুষকে মুক্তিযোদ্ধা করা হয়েছে। তাদেরকে চিহ্নিত করতে একটু সময় লাগবে।
তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই না যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা কোনোভাবে তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হোক। মুক্তিযুদ্ধ না করেও তালিকায় নাম তোলা হয়েছে, এমন কেউ স্বেচ্ছায় সরে গেলে মাফ করা হবে। আমরা একটা ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) হয়ত দেব। আর যদি সেটা না হয়, তাহলে আমরা যেটা বলেছি প্রতারণার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে অমুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অভিযোগ ফরম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যাদি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করতে সব মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের সর্বমোট সংখ্যা ৮৯ হাজার ২৩৫ জন।
উপদেষ্টা বলেন, অভিযোগ আছে যে অনেকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান না হয়েও সরকারি চাকরি নিয়েছেন এবং নানা রকমের সুবিধা নিচ্ছেন। আমরা এটাকে যখন পাবলিক ডোমেইনে নিয়ে যাচ্ছি তখন এখানে একটা ফরম দিচ্ছি। এই ফরমের মাধ্যমে যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে এবং সেটা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজাকারের তালিকা কবে নাগাদ করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক ই আজম বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। মন্ত্রণালয়ে এ ব্যাপারে কোনো ফাইল আমি পাইনি। রাজাকারের তালিকার কোনো কপি, কোনো বৃত্তান্ত নথি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কাছে নাই।
আরেক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, রাজাকারের তালিকা করতে চাইলেও করা যাবে না। এটা অত্যন্ত কঠিন বিষয়, বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যাবে না। কে কোথায় আছে, সেটা বের করা অনেক দুরূহ কাজ। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করতে গিয়েই মন্ত্রণালয় হিমশিম খাচ্ছে যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ছিল ১২ বছর ৬ মাস। ১৯৭১ সালে এর চেয়ে কম বয়সী যাদেরকে সনদ দেওয়া হয়েছে, তাদেরগুলো বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ সংখ্যাটি ২ হাজার ১৫১ জন।
এখানে মামলার একটা বিষয় আছে, সেটা আপিল বিভাগে আছে। হয়ত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আমরা আদালতের একটা সিদ্ধান্ত পেয়ে যাব।
ঢাকাটাইমস/১১ডিসেম্বর/আরএইচ/ইএসমন্তব্য করুন