কী লেখা আছে টিউলিপের পদত্যাগপত্রে?

দুর্নীতি নিয়ে জোরালো বিতর্কের জেরে যুক্তরাজ্য সরকারের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির নেতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত টিউলিপ সিদ্দিক। কী লেখা আছে তার সেই পদত্যাগপত্রে?
টিউলিপ লিখেছেন, ‘প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আপনি আমার ওপর যে আস্থা দেখিয়েছেন, সে জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার অনুরোধে সাড়া দিয়ে মন্ত্রিত্বের মানদণ্ডবিষয়ক আপনার স্বাধীন উপদেষ্টা যে দ্রুততা ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কাজ করেছেন এবং আমার বর্তমান ও অতীতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও জীবনযাপনের বন্দোবস্ত নিয়ে পুরো বৃত্তান্ত তুলে ধরার সুযোগ দিয়েছেন, সে জন্য আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।’
‘যেমনটি আপনি জেনেছেন, আমার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পুরো বিষয়ের বিস্তারিত পর্যালোচনা করে স্যার লাউরি নিশ্চিত করেছেন যে আমি মন্ত্রিত্বের বিধি (মিনিস্ট্রিয়াল কোড) লঙ্ঘন করিনি। তিনি উল্লেখ করেছেন, এমনটি বলার কোনো প্রমাণ নেই যে আমার যে সম্পদ রয়েছে বা যেখানে আমি বসবাস করেছি, সে বিষয়ে আমি অনুচিত কিছু করেছি। তা ছাড়া আইনসিদ্ধ উপায় ব্যতীত আমার কোনো সম্পদ এসেছে, এমনটি বলার কোনো প্রমাণও নেই।’
‘আমার পারিবারিক সম্পর্ক একটি প্রকাশ্য বিষয়। যখন আমি মিনিস্টার হয়েছিলাম তখন আমি আমার সম্পর্কের বিস্তারিত এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের বিষয়গুলো সরকারের কাছে তুলে ধরেছিলাম। কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যাপকভাবে আলোচনা করার পর আমি আমার স্বার্থসংশ্লিষ্টতার ঘোষণায় এটা উল্লেখ করার পরামর্শ পেয়েছিলাম যে আমার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং স্বার্থগত দ্বন্দ্ববিষয়ক ধারণা এড়াতে বাংলাদেশ–সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি থেকে আমাকে সরিয়ে রাখার জন্য। আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি যে এসব বিষয়ে পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং কর্মকর্তাদের পরামর্শ মোতাবেক কাজ করেছি এবং তা অব্যাহত রেখেছি।’
‘তা সত্ত্বেও এটা স্পষ্ট যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ইকোনমিক সেক্রেটারি হিসেবে আমার দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়াটা সরকারের কর্মকাণ্ড থেকে মনোযোগ ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে পারে। এই লেবার সরকার এবং সরকার জাতীয় পুনরুজ্জীবন ও রূপান্তরের যে কর্মসূচি নিয়েছে, তার প্রতি আমার আনুগত্য রয়েছে এবং সব সময় সেটা থাকবে। সুতরাং আমি আমার মন্ত্রিত্বের পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
‘আপনার সরকারে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পেছনের সারি থেকে যেভাবে পারি আপনার সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবো। শুভকামনা, টিউলিপ সিদ্দিক এমপি।’
এর আগে মঙ্গলবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন টিউলিপ সিদ্দিক। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান ও সংবাদসংস্থা রয়টার্সসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ খবর নিশ্চিত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
পদত্যাগপত্র পাওয়ার পর রাতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার একটি বিবৃতি দেন টিউলিপের উদ্দেশে।
সেখানে তিনি বলেন, ‘প্রিয় টিউলিপ, আপনার পদত্যাগপত্রের জন্য ধন্যবাদ। অত্যন্ত ব্যথিত মনে আপনার মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের বিষয়টি আমি গ্রহণ করছি। সিটি মিনিস্টার হিসেবে আপনি যে দায়িত্ব পালন করেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ।’
টিউলিপের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি দাবি করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণের সঙ্গে আমি পরিষ্কার করতে চাই, আমার স্বাধীন পরামর্শক স্যার লরি ম্যাগনাস আমাকে নিশ্চিত করেছেন, মন্ত্রিত্বের আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং আপনার আর্থিক অনিয়মের কোনো প্রমাণও নেই।’
স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান এবং তদন্তকারী স্যার লরি ম্যাগনাসকে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করায় টিউলিপকে আরও একবার ধন্যবাদ জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিটেনকে সমৃদ্ধকরণে ও সরকারের কাজে কোনো বিঘ্ন না ঘটাতে আপনি যে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটির তারিফ করছি। আপনাকে স্পষ্ট করে জানাতে চাই, আপনার সামনে এগিয়ে যাওয়ার দরজা খোলা রয়েছে।’
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের নানা কেলেঙ্কারির খবর সামনে আনে কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মিত্রদের কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট নেওয়াসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ ওঠে।
এরইমধ্যে টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ। এছাড়া সরকার দলীয় সংসদ সদস্যদের কয়েকজন টিউলিপের বিনামূল্যের ফ্ল্যাট পাওয়া নিয়ে তার বিরুদ্ধে কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগের তদন্তে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপের নামও আসে। এ ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা অফিসের ন্যায় ও নৈতিকতা দল।
(ঢাকাটাইমস/১৫জানুয়ারি/এজে)

মন্তব্য করুন